জঙ্গি শব্দটি মূলত জাং বা যুদ্ধ শব্দ থেকে এসেছে। সন্ত্রাসের ইংরেজি Terrorism. আঠার শতকে ফরাসি বিপ্লবের সময় চরমপন্থী সন্ন্যাসীদের Terror হিসেবে ডাকা হতো। মূলত এ ল্যাটিন শব্দ থেকেই Terrorism শব্দটির উৎপত্তি। আজকাল জঙ্গি বলতে সাধারণত দাড়ি-পাগড়িওয়ালা, পাশে অস্ত্র রাখা কোনো মুসলিমকে বোঝানো হয় পশ্চিমা বিশ্বে। তাই প্রশ্ন, অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কি জঙ্গি নেই?
আছে, তবে খোলামেলাভাবে বললে জঙ্গির কোনো ধর্ম নেই, বরং জঙ্গিরা একেকটি ধর্মের লেবাস ধারণ করে। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো (যার বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে ইহুদিরা) মুসলমানদের সঙ্গে জঙ্গি শব্দটিকে এমনভাবে ট্যাগ করছে এবং এত বেশি নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে যেন জঙ্গি শব্দটি শুনলেই মনের ভেতর কোনো মুসলমানের চেহারা ভেসে ওঠে।
বিশ্বে চলমান অস্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ বা যুদ্ধের মূল উৎস কী? ধর্ম, রাজনীতি, নাকি অন্য কিছু? সাদা চোখে দেখলে আমাদের কাছে মনে হবে ধর্মই বর্তমান বিশ্বে জঙ্গিবাদ বা যুদ্ধের একমাত্র উৎস; কিন্তু এর কারণগুলোর গভীরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে জঙ্গিবাদ বা যুদ্ধের মূল কারণ অন্যকিছু, ধর্মকে এখানে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। বিশ্বে চলমান যুদ্ধগুলোর দিকে যদি আমরা তাকাই অর্থাৎ সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া বা ফিলিস্তিন- কোনো একটি যুদ্ধ কি ধর্ম নিয়ে সংঘটিত হচ্ছে?
না, ক্ষমতা বা রাজনীতি এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে। বড় বড় যুদ্ধের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পৃথিবীতে মোট যুদ্ধের মাত্র ৭ শতাংশ হয়েছে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে। মানবেতিহাসের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ১৭৬৩টি বড় ধরনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ১২৩টি ছিল ধর্মীয় কারণে। বড় বড় ১১টি ধর্মযুদ্ধে (ক্রসেড) গড়ে ২০ লাখ লোক নিহত হয়। আর শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই নিহত হয় ৬ কোটি ৬০ লাখ লোক।
তাছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দেড় কোটি, হিরোশিমা-নাগাসাকিতে ২ লাখ, হিটলারের হাতে ১ কোটি ৭০ লাখ, সোভিয়েত আমলে রাশিয়ায় ২ কোটি ৯০ লাখ, চীনে ৪ কোটি, ভিয়েতনামে ১৭ লাখ এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ কি ধর্ম? অবশ্যই না, এখানে ধর্মের কোনো বিষয়ই ছিল না, সম্পূর্ণটাই ছিল রাজনীতির বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের University of North Carolina-এর সমাজ বিজ্ঞানের প্রফেসর Charles Kuryman তার গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশ করেছেন, নাইন-ইলিভেনের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মোট খুন হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ, যার মধ্যে মাত্র ৩৭ জন নিহত হয়েছে মুসলিম আমেরিকানদের হাতে। তারপরও পশ্চিমা বিশ্বে কেন এত মুসলিম ফোবিয়া?
অসলেই কি এটি ভীতি নাকি ধর্মের নামে যুদ্ধ বাধিয়ে তাদের অস্ত্র বিক্রির ধান্ধা, যেখানে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো। মুসলমানরা যদি যুদ্ধবাজ বা জঙ্গি হতো, তাহলে কেন তাদের বেশিরভাগ দেশে বাধ্যতামূলক সামরিক সার্ভিস বা ট্রেনিং নেই? অথচ রাশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপ ১ বছর করে, আফ্রিকায় ২ বছর করে, ইসরাইলে ৩২ মাস, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬ বছর এবং উত্তর কোরিয়ায় ১১ বছর করে বাধ্যতামূলক সামরিক সার্ভিস বা ট্রেনিং করতে হয় যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে।
সুত্রঃ যুগান্তর