কোন মানুষ কখনই কোন জাতিগোষ্ঠী বা সম্প্রদায় সম্পর্কে তাদের জাত পাত জন্মসুত্রে প্রাপ্ত ধর্ম জাতীয়তা লিঙ্গ ইত্যাদির কারণে তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না। সেটা তারা মুসলিম হিন্দু ইহুদী খ্রিষ্টান হোক কি পাকিস্তানী ইসরাইলী সৌদী আরবীয় হোক কি সমকামী বা হিজরা হোক, বা নারী পুরুষ হোক, বিদ্বেষ বা ঘৃণা পোষণ জন্মসুত্র প্রাপ্ত ধর্ম বর্ন লিঙ্গের ভিত্তিতে হতে পারে না, কারণ এসব ক্ষেত্রে মানুষের কোন হাত থাকে না।
একজন ইহুদী পরিবারে জন্ম নেয়া শিশু, নারী বা বৃদ্ধ, সে পরিবারের সৎ ভালমানূষ ইহুদী ব্যক্তির প্রতি আমি কেন এবং কিসের ভিত্তিতে ঘৃণা পোষণ করবো? একজন পাকিস্তানী কৃষক, যে সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে রাতের বেলা তার স্ত্রীর সাথে বসে রুটি খায়, ভালবাসার কথা বলে, তাকে আমি কেন ঘৃণা করবো? একজন সমকামী পুরুষ, যে তার ভালবাসার পুরুষটির হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজে গোছল করতে চায়, ভালবাসার পুরুষটিকে জড়িয়ে ধরতে চায়, তার প্রতি আমার বিদ্বেষ কেন থাকবে? একজন মুসলিম পুরুষ, যে দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে সৎভাবে জীবন যাপন করে, তাকে ঘৃণা করার প্রশ্নই কেন আসবে?
আমি দেখতে চাই একজন মুসলিম একজন ইহুদীকে ভালবেসে বুকে জড়িয়ে ধরবে, একজন বাঙালী একজন পাকিস্তানীকে ভাই বলে ডাকবে, একজন নারী এবং একজন পুরুষ সব দিক দিয়ে সমকক্ষতা অর্জন করবে, একজন স্ট্রেইট এবং সমকামী উভয়ই উভয়কে ভালবাসবে। তবে এসব হবার আগে সেই সব ধর্মবাদী-প্রথাগত-লিঙ্গবাদী-জাতীয়তাবাদী ঘৃণার রাজনীতি পরিবর্তন করতে হবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। ঘৃণার যেই বিষবৃক্ষ আমাদের ভেতরে গেঁথে দেয়া হয়েছে, সেই বিষবৃক্ষকে উপরে ফেলতে না পারলে মানবিক সাম্যবাদী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র শুধু কল্পনাতেই থাকবে।
পৃথিবীর অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সমকামিতা বা সমলিঙ্গীয় মিলন আইনে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন কি তা যদি দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পূর্ণ সম্মতিতে হয় তবুও। বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারা সমকামিতাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক অপরাধ হিসেবে গন্য করছে। উক্ত ধারায় উল্লেখ করেছে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ, নারী বা জন্তুর সহিত, প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে (যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে) দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
আমাদের মনে উচিৎ যে সমকামী ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সমকামী হয় না এবং স্ট্রেইট ব্যক্তিরা যেমন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন বোধ করে, সমকামি ব্যক্তি চাইলেই সেভাবে নিজেদের স্ট্রেইট হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। সমাজে অন্য দশজন ব্যক্তির সাথে একত্রে বসবাসের জন্য আমাদের অবশ্য সংস্কারমুক্ত খোলা
মনে অধিকারী হওয়া উচিত। সকল ব্যক্তি আমাকে সেক্সুয়ালী আকর্ষন করবে বা করে তা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। আমি যদি একজন মেয়ে মানুষ হই তবে কি আমি ভেবে নিব যে সকল পুরুষ মানুষই আমাকে সেক্সুয়ালী পেতে চায়, যেহেতু তারা মেয়ে মানুষ পছন্দ করে?
যদি আমরা তা মনে করি তবে সেটা অত্যন্ত হাস্যকর হবে এবং এটা সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোন ব্যক্তি লিঙ্গগত কারণে আকর্ষন বোধ করলে যে সে তার প্রতি সেক্সুয়ালী আগ্রহী তা কিন্তু নয়। একজন ভিন্ন যৌন প্রবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তি অর্থাৎ সমকামী ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা এবং বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্ব করার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। যদি আমাদের এ বিষয়ে মতভেদ থেকে থাকে তবুও আমাদের সমকামী ব্যক্তিদের অপমান বা চরম শাস্তি কোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না । সমকামী বিবাহসহ সমকামিতা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর বিপরিতে মতামত প্রদানসহ সকল প্রকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। তাই সমকামী ব্যক্তির প্রতি কোনভাবেই বৈষম্য বা তাদের নির্যাতন করার অধিকার কারোর নেই।