দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে ব্যাক্তিগত ভিডিও ফাঁসের । আর এই ভয়ংকর কাজটি সহজেই করে ফেলছে প্রযুক্তির ব্যবহার করে। রাত জেগে ফেসবুক, টুইটার, ইমো, ভিগো, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার যেন এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবে নেই তো, আপনি ব্যাকডেটেড। ভিগো লাইভে তো কোনো প্রাইভেসিই নেই। আপনি কি করছেন, তা সহজেই দেখতে পারবেন যে কেউ। ভিগো লাইভে মধ্যরাত থেকে বসে অশ্লীলতার মেলা! এতদিন যা ইউটিউব দখলে রেখেছিল। এখন তা একচেটিয়া ভিগোর দখলে। নোংরামির সেই ফুটেজ একে একে অন্যসব মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ফুটেজ দিয়ে একে অন্যকে ব্ল্যাকমেইলও করছে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সবচেয়ে বড় ‘অসামাজিক মাধ্যমে’ রূপ নিয়েছে। এসব মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বিচরণ করে তরুণ সমাজ। তাই ঝুঁকিটাও বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ার কুফলের প্রভাব সমাজে বিশৃঙ্খলতা ও অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। এভাবে চলতে থাকলে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, পিছিয়ে যাওয়া এখন অনেক কাছে চলে এসেছে।
প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সমাজের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনসহ কিছু মনস্তাত্ত্বিক এবং আচরণগত পরিবর্তনও লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার একটি স্কুলে মোট ৩০ জন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসরুমে বসে পর্নোগ্রাফি দেখে এরকম ২৫ জনের মোবাইল ফোনে পর্নোগ্রাফি পাওয়া যায়। অপরদিকে, ১০০ জন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ৮৬ জন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, যাদের মধ্যে ৭৬ জন পর্নোগ্রাফি দেখে। ফলে তাদের আসক্তির মাত্রা বেড়ে চলছে পাশাপাশি লেখাপড়ায় অমনোযোগীর সংখ্যাও লক্ষণীয়। কিছু বিকৃত রুচিহীন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, মিউজিক ভিডিও, পর্নোগ্রাফি কিশোর ও যুবকদের খারাপ কাজে উদ্দীপনা তৈরির পাশাপাশি অনুকরণে উৎসাহ দেয়। ফলে বড় বড় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি যুবসমাজ বিপথগামী হওয়ার কারণ হিসেবে আমেরিকান কয়েকজন গবেষক প্রযুক্তির অপব্যবহারকে দায়ী করেছেন।
ইদানিং মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির মারাত্মক বিস্তার ঘটেছে। এ কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আইন বা নির্দেশনা নেই। কম দামি হওয়ায় মাল্টিমিডিয়া সুবিধা সম্বলিত হ্যান্ডসেট তরুণদের হাতে হাতে ঘুরে ফিরছে। ইন্টারনাল বা এক্সটারনাল মেমোরির মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও চিত্রগুলো সংরক্ষণ ও ব্লু টুথ প্রযুক্তিতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের মোবাইল ফোনে। এক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী ও গৃহবধূরা।
এর সর্বশেষ উদাহরন হলো শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন হাওলাদার।যিনি গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা রেখে স্থানীয় এক নারীর ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করে। গোপন ক্যামেরায় ধর্ষণেরও ভিডিও করে। ওই ভিডিও এখন মোবাইলের মাধ্যমে মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।সলখানায় গোপন ক্যামেরা রেখে স্থানীয় এক নারীর ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করে। গোপন ক্যামেরায় ধর্ষণেরও ভিডিও করে। ওই ভিডিও এখন মোবাইলের মাধ্যমে মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।শুধু তাই নয় অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে সে অনেক নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই ধরনের অপরাধ দমনে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা বেশী জরুরী। পরিবারের অসচেতনতাও যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সুষ্ঠু বিনোদনের অভাব থেকেই মূলত ধ্বংসের পথে পা বাড়াচ্ছে।
নৈতিক অধঃপতন থেকে তাদের ফেরাতে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় লাইব্রেরী ও খেলাধুলার ক্লাব স্থাপন করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবারকে সন্তানের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার বন্ধ করতে সরকারেরও সমান দায়িত্ব রয়েছে।