২০ অক্টোবর ভোলার বোরহানউদ্দিনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের বিচারের দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেএকপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত চারজনকে নিজেদের কর্মী–সমর্থক বলে দাবি করেছে তৌহিদী জনতা। সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, এক যুবকের হ্যাক হওয়া আইডি থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বক্তব্য ছড়ানোর ঘটনা থেকে এ পরিস্থিতির সূত্রপাত।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক ব্যক্তির বিচারের দাবিতে ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে তৌহিদী জনতা।
হতে পারে কেউ একজন মহানবীকে নিয়ে ফেসবুকে কিছু একটা লিখলেন। এমন হতে পারে তার জ্ঞানের অভাব অথবা দৃষ্টিভঙ্গি। এ কারণে তাকে মেরে ফেলতে হবে, এ কথা ইসলামের কোথায় আছে? মহানবীর জীবিতকালে তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলার লোক ছিল না? তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছে এমন লোক ছিল না? তাঁর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো এমন মানুষ ছিল না? মহানবী চাইলে এদের সবাইকে চূড়ান্ত শাস্তি দিতে পারতেন না? কিন্তু যুদ্ধের ময়দান ছাড়া মহানবী কারো গায়ে সামান্য একটা আঁচড় দিয়েছেন, এরকম উদাহরণ কোনো ইসলামিক পণ্ডিত বলতে পারবেন? মহানবী যে মাত্রার সহনশীল মানুষ ছিলেন, তাঁর আগে পরে আর কোনো মানুষ এতটা সহনশীল, দয়ালু ও পরোপকারী কি ছিলেন? সুতরাং মহানবী সম্পর্কে কে কী বললেন বা লিখলেন তাতে তাঁর কী আসে যায়? তাতে ইসলাম ধর্মেরই বা কী আসে যায়? বরং কেউ যদি ফেসবুকে মহানবী সম্পর্কে কোনো খারাপ কথা লেখে, তার ফেসবুকেই এর জবাব দেয়া যায়। তাকে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি দিয়ে বোঝানো যায়। কিন্তু তারপরেও যদি কেউ বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার জন্য আইনি প্রতিকার আছে। এসবে না গিয়ে হাজার হাজার লোককে রাস্তায় নামিয়ে ইসলাম ও মহানবীর ভাবমূর্তি রক্ষায় যে কথিত জিহাদের ডাক দেয়া হলো, তাদের আসল উদ্দেশ্যটা কী? এমনকি প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতার পরও কাদের উসকানিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামলো?
যারা রাস্তায় নামলেন তাদের কতজন ফেসবুক ব্যবহার করেন এবং ফেসবুক সম্পর্কে জানেন? চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়, ‘তৌহিদী জনতা’র নামে যে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, তাদের অধিকাংশই ফেসবুক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন না বা ফেসবুকে কিছু একটা লিখলে যে তাতে কিছু যায় আসে না, সেটিও তাদের মাথায় থাকে না। আবার কোনো বিশিষ্ট লোকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামেন তাদের নিয়তে হয়তো কোনো গড়মিল থাকে না। তারা হয়তো মনেই করেন, নিজের ধর্মের পক্ষে দাঁড়ানো বা পরকালে শান্তি লাভের জন্য এই প্রতিবাদটুকু তার করাই উচিত। কিন্তু নিজে অনুসন্ধান করেন না, আসলে কী ঘটেছিল বা সেটি কতটা গুরুতর?
প্রত্যেক সমাজে কিছু লোক থাকে যারা সব সময়ই অন্যকে হেয় করে মজা পায়। কিছু দুবৃত্ত থাকে যারা সব সময়ই কোনো একটি ঘটনা থেকে ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ফায়দা সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে। তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কখনো শক্তি আর অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা যাবে না৷ আমাদেরকে আমাদের বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে লড়াই করতে হবে৷ গ্রামে-গঞ্জে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷