বহুদিন ধরেই আমার একটি প্রশ্ন রয়েছে তা হলো, কোন বক্তব্যে বা কী কথায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে বা ধর্মীয় অনুভূতির মানদণ্ডই বা কী?ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে বাড়াবাড়ির খবর নতুন কিছু নয়। তবে সবশেষ লালমনিরহাটের পাটগ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি কোনও ধর্মপ্রাণ মানুষ তো বটেই, যিনি কোনোদিন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও যাননি, তিনিও মেনে নিতে পারেন না।
কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা এবং তারপরে তাকে পুড়িয়ে ফেলা কোনও ধর্মই অনুমোদন করে না। যারা এই কাজ করেছেন, তারা যে ধর্মীয় অনুভূতি থেকে এই কাজ করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মদ (সা.) সারা জীবনই সহনশীলতা ও ভিন্নমত প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। যে মক্কা থেকে তিনি কার্যত বিতাড়িত হয়েছেন—সেই মক্কা বিজয়ের পরে তিনি শত্রুদের প্রতিও যে মানবিক আচরণ করেছেন—সেটিই প্রকৃত ইসলাম। অথচ কোরআন অবমাননা হয়েছে বলে একজন লোককে পিটিয়ে মারা হলো; মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হলো।
যারা জুয়েলকে হত্যার পরে পুড়িয়ে দিলেন, তারা এই সমাজেরই মানুষ। নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ধর্ম পালন করেন। মসজিদে যান। রোজা রাখেন। যে মানুষ নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, তিনি কী করে আরেকজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারেন?
জুয়েল নামে যে লোককে মারা হয়েছে, শোনা যাচ্ছে তিনি মানসিকভাবেও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না। মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ যদি আপত্তিকর কোনও মন্তব্য করেন বা কাজ করেন, তারপরও কি তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়? কারা এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন? তাদের এত উৎসাহ কেন? ধর্মের কোন বাণীতে তারা উজ্জীবিত হয়েছেন? মানুষ মেরে ফেলায় এত আনন্দ কেন? ঘটনার সময়ে সেখানে এর প্রতিবাদ করার মতো কেউ কি ছিলেন না?
ধর্মীয় অনুভূতি কি এতই ঠুনকো বিষয় যে কেউ কিছু একটা বললেই সেটি আঘাতপ্রাপ্ত হবে? ইসলামের মতো একটি মানবিক ধর্মের অনুসারী মানুষ কী করে এতটা হিংসাত্মক হতে পারে? যারা ইসলাম এবং কথিত জিহাদের নামে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা দেশে উগ্রবাদের বিস্তার ঘটিয়েছেন, তারা কোন ইসলাম প্রচার করতে চান?
ধর্মের নামে হত্যা-গণপিটুনি-আগুনে পোড়ানোর মত মধ্যযুগীয় বর্বরতা আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে কোনোভাবেই চলতে পারে না।ধর্মীয় উগ্রবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। লালমনিরহাটের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে; মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
1 comment
ধর্মের নামে হত্যা-গণপিটুনি-আগুনে পোড়ানোর মত মধ্যযুগীয় বর্বরতা আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে কোনোভাবেই চলতে পারে না কিন্তু স্বার্থনেষী কিছু মানুষ নিজের বা দের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ধর্মকে পুঁজি করে সাধারন মানুষের চেতনায় আগুন ঢালে