ওয়াজ-মাহফিলে মাহমুদ হাসান গুনবির বক্তব্য শুনে অনেকে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। বিগত সময়ে আনসার আল ইসলামের জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা এমনটা জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) বিকেলে আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা মাহমুদ হাসান গুনবি ওরফে হাসানকে গ্রেফতারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গুনবির বক্তব্যে মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আছে। গ্রেফতার জঙ্গি সাকিব ও ওসামাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গুনবি তাদের কাছে আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচিত। বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষের মতাদর্শ পরিবর্তন করার একটি ক্ষমতা তার মধ্যে প্রবল আকারে রয়েছে। আনসার আল ইসলামের গ্রেফতার হওয়া অনেক জঙ্গি সদস্য ওয়াজ-মাহফিলে গুনবির উগ্রবাদী মতাদর্শের বক্তব্য শুনে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন। গুনবি বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রুপকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রাজবাড়ী মাদ্রাসায় নিয়ে উগ্রবাদী বক্তব্য দিয়ে তাদের মধ্যে জঙ্গি মতাদর্শ ঢুকাতেন।
গুনবির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ও হামলার পরিকল্পনা ছিল কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনের কাজ করেছেন। সম্প্রতি তিনি একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেছেন। ওই সংগঠনের বিভিন্ন মিটিং বা মাহফিলে যোগদান করলেও তার কোনো সাংগঠনিক পদ ছিল না। তবে দাওয়াতে ইসলামের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (আনসার আল ইসলাম) আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।
গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি ওসামার সঙ্গে কী ধরনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে গুনবি—এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ওসামার সঙ্গে তার কী সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সে বিষয়ে আমাদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গুনবি। রাজবাড়ীতে ওসামার যে মাদ্রাসা রয়েছে সেখানে নিয়মিত মাহফিলে বক্তব্য দিতেন তিনি। সেখানে গুনবি উগ্রবাদী আদর্শ প্রচার করতেন। সেই মাদ্রাসায় তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে এসেছে ওসামা ও সাকিবের যে পরিকল্পনা ছিল সেখানে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। আর এই হামলার পরিকল্পনায় গাইড লাইনটি ছিল গুনবির।
গ্রেফতার জঙ্গি ওসামা ও সাকিবের কী পরিকল্পনা ছিল জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল সংসদ ভবনের আশেপাশে তারা জমায়েত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করবে। এই পরিকল্পনার সময় গুনবি আত্মগোপনে চলে যান। তাকে আমরা তখন থেকেই খুঁজছিলাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন ওসামা ও সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখনও গুনবির নাম উঠে আসে।
গত ৬ জুলাই গুনবিকে নোয়াখালী সদর থেকে র্যাব উঠিয়ে নিয়ে এসেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। এমন অভিযোগ করে গত ৯ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে গুনবির পরিবার। এ বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৬ জুলাইয়ের পর থেকে র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে আসছিল। যেহেতু তিনি আত্মগোপনে ছিলেন, তাই তাকে পাওয়া যায় এমন সম্ভাব্য সব স্থানে র্যাব অভিযান পরিচালনা করেছে। সে ক্ষেত্রে কোথাও র্যাবের ছবি আসতে পারে। তবে আমরা গতকাল তাকে রাজধানীর শাহ আলী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছি।
বাংলাদেশে গুনবির মতো অনেক বক্তাই তালেবান পন্থি। তাদের বক্তব্যের কারণে দেশের অনেক যুবকের মধ্যে তালেবানদের বিষয়ে সফট কর্নিার তৈরি হচ্ছে। এ কারণে এসব বক্তাদের বিরুদ্ধে র্যাব অভিযান পরিচালনা করছে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, যাতে দেশের ভেতরে জঙ্গি উত্থান না হয়, সেই জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের তৎপরতার কারণে দেশে এখন পর্যন্ত জঙ্গি মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারছে না। আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতির ওপর আমরা নজদারি রাখছি। পাশাপাশি অনলাইনে বিভিন্ন জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের সদস্যরা নজরদারি করছেন।
বাংলাদেশ থেকে তালেবানদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে দেশীয় জঙ্গিদের আফগানিস্তানে যাওয়ার কোনো প্রবণতা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা সব থেকে বেশি গ্রেফতার হচ্ছেন। র্যাব এখন পর্যন্ত ৩৭০ জন আনসার আল ইসলামের জঙ্গিদের গ্রেফতার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা আফগানিস্তানে যাবে বা তালেবানদের সঙ্গে যুক্ত হবে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তাদের মধ্যে উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক শ্রেণির স্কলাররা চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের অনেক স্কলারকে আমরা গ্রেফতার করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে গুনবির কী ধরনের তৎপরতা ছিল জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গুনবি যখন ২০০৮ সালে তার পড়াশোনা শেষ করেন তখন তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন এবং ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখতেন। যার অধিকাংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা ও কক্সবাজার জেলায়। এছাড়া খাগড়াছড়িতে তার নিজেরও একটি মাদ্রসা আছে। ওই জায়গাগুলো নিরিবিলি হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন গ্রুপকে মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিতেন।
আনসার আল ইসলামের মানহাজি সদস্য কতজন রয়েছে, এ বিষয়ে র্যাবের কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তিন জন মানহাজি সদস্যের নাম আমরা পেয়েছি। তার মধ্যে গুনবি একজন।
রাজধানীর কোন এলাকায় জঙ্গিদের তৎপরতা বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করলে দেখা যায় জঙ্গিদের তৎপরতা রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বেশি। আমরা অনেক জঙ্গিকে মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছি।
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে গুনবির কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, সরাসরি এই সংগঠনে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন সমাবেশে তিনি যোগদান করেছেন।
দাওয়াতি ইসলামের মাধ্যমে কত জন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে গুনবি ইসলাম ধর্মে আনতে পেরেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, কয়েক জনকে তিনি আনতে পেরেছেন। তাদের তিনি জঙ্গিবাদে আনার জন্য নানা উগ্রবাদী বক্তব্যের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন।
1 comment
গুনবির বক্তব্যে মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আছে সত্য তবে ইসলামের প্রতি মানুষকে প্রভাবিত কররা।