কুড়িগ্রামের রৌমারীতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলে ‘ধর্ষণের শিকার’ চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীর অবৈধ ‘গর্ভপাত’ ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। গর্ভপাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর ছোট ভাই বাদী হয়ে উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য (ওয়ার্ড ৪, ৫, ৬) আজিজুন্নাহার রূপা, ওই ইউনিয়নের উত্তর খঞ্জনমারা গ্রামের শহিদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম এবং ভুক্তভোগী নারীর চাচা আবু তালেবকে অভিযুক্ত করে রৌমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রৌমারী থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মুনতাছের বিল্লাহ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী নারীর ছোট ভাই জানান, উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের উত্তর খঞ্জনমারা গ্রামের মৃত নাবুল্লার ছেলে শহিদুর রহমান (৩৫) ওই নারীকে একাধিকবার ‘ধর্ষণ’ করে। এতে ওই নারী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি গত শনিবার বুঝতে পেরে তারা স্থানীয় মাতব্বর নুরুল ইসলাম ও তার ভাই রফিকুল ইসলামকে (দুজনই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) জানালে তারা বিষয়টি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরে রবিবার রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি ডায়ানস্টিক সেন্টারে তারা ওই নারীকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান। এ সময় তাদের সঙ্গে বন্দবেড় ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য আজিজুন্নাহার রূপা, রফিকুল ইসলাম ও ভুক্তভোগীর চাচা উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী নারীর বরাত দিয়ে তার ছোট ভাই বলেন, ‘আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার কথা বলে হক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার বোনের গর্ভপাত করা হয়। এ সময় যন্ত্রণায় আমার বোন যখন চিৎকার করছিল, তখন নারী ইউপি সদস্য আমার বোনের মুখ চেপে ধরেছিলেন। সেখান থেকে বাড়িতে নেওয়ার পর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাকে রৌমারী হাসপাতালে ভর্তি করি এবং রৌমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করি।’
‘আজ (সোমবার) রোগীর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার তাকে রেফার্ড করেন। কিন্তু টাকার অভাবে আমরা তাকে বাইরে নিতে পারছি না। আপনারা একবার এসে দেখে যান, আমার বোনের কী করুণ অবস্থা!’ এভাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী নারীর ছোট ভাই।
ভুক্তভোগী নারীর প্রতিবেশীরা জানান, ধর্ষণের অপরাধ ঢাকতে শহিদুর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই নারীর গর্ভপাত ঘটানোর ব্যবস্থা করেছে। এ ঘটনার জন্য তারা ইউপি সদস্য আজিজুন্নাহার রূপা, রফিকুল ইসলাম ও আবু তালেবকে দায়ী করেন।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই নারীর ভাই আমার কাছে এসে অভিযোগ করলে আমি তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দিই। তারা স্থানীয় সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলে সেখানকার চিকিৎসক ওই নারীর পেটে টিউমার রয়েছে বলে জানান। কিন্তু পরের দিন থেকে শুনছি তার নাকি গর্ভপাত করানো হয়েছে।’
ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ইউপি সদস্য আজিজুন্নাহার রূপা উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘একটি চক্র ধর্ষণের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতেই গর্ভপাতের নাটক সাজাচ্ছে। সঠিক পরীক্ষা করলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে।’
এ ব্যাপারে জানতে ইউপি সদস্য আজিজুন্নাহার রূপার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বন্দবেড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ইউপি সদস্য আজিজুন্নাহার রূপার বরাত দিয়ে বলেন, ‘এমন অভিযোগ শোনার পর আমি রূপার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে আমাকে জানায়, ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সে সঙ্গে গিয়েছিল। কিন্তু গর্ভপাতের কোনও ঘটনা সে জানে না।’
রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সেলিম বলেন, ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি কথা বলতেও পারছেন না। আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছি।’
ওই নারীর গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে এই আবাসিক চিকিৎসক বলেন, ‘ভুক্তভোগী অত্যন্ত অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলতে পারছেন না। তবে তার পরিবার তেমনটাই দাবি করেছে। আমরা মঙ্গলবার তার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে কিনা পরীক্ষার পর নিশ্চিত করে বলা যাবে।’
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন
6 comments
কত নিম্ন মানুষিকতার লোক হলে একটি প্রতিবন্ধী নারী কে ধর্ষণ করে মানুষ
শহিদুর রহমান কে নিয়ে যারা সালিস বিচার করলো তারা কারা তাদের বিচার আগে করা দরকার
ইউপি সদস্য আজিজুন্নাহার রূপাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক তিনি এই গর্ভপাতের মূল পরিকল্পনাকারী
শহিদুর রহমান ইউপি সদস্যে রূপা যোগসাজশে প্রতিবন্ধী নারীর সর্বনাশ করছে এদের ধরলে সঠিক ঘটনা বা তথ্য বের হবে
আজিজুন্নাহার রূপা, ওই ইউনিয়নের উত্তর খঞ্জনমারা গ্রামের শহিদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম এবং ভুক্তভোগী নারীর চাচা আবু তালেবে এরাই নাটের গুর।
আজিজুন্নাহার রূপা, একজন ইউপি নারী সদস্য নারীদের ব্যাপারে তার সোচ্চার থাকার কথা অথচ আসামীর পক্ষ হয়ে প্রতিবন্ধীকে জীবনের যুকিতে ফেলল