সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের নির্দেশেই স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়। তার নির্দেশে খুনিদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন এহতেশামুল হক ভোলা। তার কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে যান কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা। হত্যা শেষে মুসা পুনরায় ভোলাকে অস্ত্র ফিরিয়ে দেন।
শনিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলা।
এদিন ভোরে তাকে যশোরের বেনাপোল থেকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশন-পিবিআই। পরে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে নেওয়া হয়। তাকে মিতু হত্যার ঘটনায় বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে জবানবন্দি দেন ভোলা।
২০১৬ সালের ৫ জুন আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও হত্যার মাস্টারমাইন্ড কে, তা নিয়ে এতদিন ছিল রহস্য। ভোলা জবানবন্দিতে জানান, সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের নির্দেশেই মিতুকে হত্যা করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে এহতেশাম বলেন, বাবুল আক্তার ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তার সোর্স ছিলেন কামরুল শিকদার ওরফে মুছা। কামরুলের সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল এহতেশামের। এহতেশামের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় মামলা রয়েছে ২০টি। কামরুল এহতেশামকে বাবুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর পর থেকে বাবুলকে বিভিন্ন তথ্য দিতেন এহতেশাম। নগরের ডবলমুরিং থানা এলাকায় গুলি করতে যাওয়া এক ব্যক্তির তথ্য বাবুলকে দেন এহতেশাম। ওই ঘটনার আসামি ধরে বাবুল বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পরে বাবুলের নির্দেশে কামরুলকে এহতেশাম তার বালুর ব্যবসায় ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেন।
জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, ২০১৬ সালের মে মাসের দিকে কামরুল এহতেশামকে বলেন, স্যার (বাবুল) পারিবারিক সমস্যায় আছেন। তার স্ত্রীকে খুন করতে হবে। এ জন্য এহতেশাম যাতে অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন। তখন এহতেশাম পারিবারিক বিষয়ে না জড়াতে কামরুলকে অনুরোধ করেন। কামরুল বিষয়টি বাবুলকে জানিয়ে দেন। পরে বাবুল এহতেশামকে ডেকে পাঠান। বিষয়টি তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে জানালে ঝামেলা হবে বলে হুমকি দেন। এরপর বিষয়টি কাউকে বলেননি এহতেশাম।
জবানবন্দিতে এহতেশাম বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন তিনি। কামরুলও শুরুতে রাজি ছিলেন না। তাকে এ কাজ না করলে ‘ক্রসফায়ারের’ হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল। যার কারণে কামরুল রাজি হন।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। তখন তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিন মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে। এ মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৫ জন কারাগারে রয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘ভোলা বলেছেন, মিতুকে হত্যায় স্বামী বাবুল আক্তারের নির্দেশে মুসাকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন তিনি। জবানবন্দি শেষে আদালত ভোলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সুত্রঃ ঢাকা টাইমস
6 comments
বাবুল আক্তার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।
বাবুল আক্তার নিজেকে প্রায় নিরাপদ অবস্থায় নিয়েই গিয়েছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।
সাবেক এসপি বাবুল আক্তার বিচারের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি দাবী করছি।
100% true. The people of Bangladesh are unsecured.
বাবুল আক্তার নিজেকে খুব বড় ধরনের চালাক ভাবতো তিনি যাই করুক না কেন কিছুই হবে না
নিজের স্ত্রীকে হত্যার জন্য লোক ও অস্ত্র ভাড়া করার পরিকল্পনা বাবুল আক্তারই