নারী পাচারচক্রের প্রধান অভিযুক্তসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তরুণীদের বিনোদন জগতে সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে বিদেশে পাচার করতো এই চক্রের প্রধান ডিজে কামরুল। গ্রেফতারের পর চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, একই রকম তথ্য দিয়েছেন পাচারের শিকার তরুণীরা। শনিবার দুপুরে র্যাব-৪-এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য দিয়েছেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, পাচার চক্রের সদস্যরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সুন্দরী তরুণীদের ঢাকায় নিয়ে আসতো। পরে নাচ-গান শেখানোর পাশাপাশি তাদের বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলতো। এরপর ভালো বেতনে চাকরির কথা বলে প্রতিবেশী দেশে পাচার করতো। এভাবে চক্রটি তিন বছরে শতাধিক তরুণীকে পাচার করেছে। পাচারের পর তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো হতো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত এই চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো পাচারচক্রের প্রধান কামরুল ইসলাম জলিল ওরফে ডিজে কামরুল, রিপন মোল্লা, আসাদুজ্জামান সেলিম, নাইমুর রহমান, মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারচক্রের সদস্য নুর নবী ভুঁইয়া রানা, আবুল বাশার, আল ইমরান, মনিরুজ্জামান, শহিদ শিকদার, প্রমোদ চন্দ্র দাস ও টোকন। এই সময় রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, তেজগাঁও ও চুয়াডাঙ্গা থেকে ২৩ তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৫৩টি পাসপোর্ট, ২০টি মোবাইল ফোন, বিদেশি মদ, ২৩ ক্যান বিয়ার, দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। চক্রটি রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে। সিন্ডিকেটে সদস্যরা ভিকটিমদের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন প্রদেশে অনৈতিক কাজ করানোর উদ্দেশ্যে বিক্রি করে দিতো। চক্রের ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি মানবপাচারে জড়িত।
২০০১ সালে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন কামরুল। এরপর বাড্ডা এলাকায় রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা শুরু করেন। কিছুদিন পর একটি কোম্পানির ডেলিভারি ভ্যানচালক হিসেবে কাজ নেন। এরপর ড্যান্স গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে হাতিরঝিল এলাকায় ‘ডিজে কামরুল ড্যান্স কিংডম’ নামে একটি ড্যান্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এই ড্যান্স ক্লাবের মাধ্যমে উঠতি বয়সী মেয়েদের বিনোদন জগতে প্রবেশের নামে প্রলুব্ধ করতেন। একপর্যায়ে তাদের উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করতেন।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশে বাংলাদেশের তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা বস রাফিসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এক তরুণীকে ভারতে পাচারের অভিযোগে কামরুলের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর বোন। সেই মামলায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পুলিশ তাকে আটক করে। তিন মাস পর কারাগার থেকে বের হয়ে আবার নারী পাচারে জড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। তারা হাউজকিপিং, নার্স, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি পেশায় নারী কর্মীদের বিনা পয়সায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সী তরুণী ও মধ্যবয়স্ক নারীদের প্রলুব্ধ করতো। এই চক্র ইতোমধ্যে ৩০-৩৫ জন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। পাচারকারীরা ঢাকায় কয়েকটি সেফ হাউস পরিচালনা করে। বেশ কয়েকদিন সেফ হাউসে ভিকটিমদের রেখে সুবিধাজনক সময়ে পাচার করতো।
সুত্রঃ ইত্তেফাক
3 comments
বাংলাদেশে অল্প বয়সী নারীদের বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখিয়ে পাচার করে এসব পাচারকারীরা
All information are true and if the authority knows it why can’t it be uprooted? Is there any solid reason behind it? Can we assume that some corner of the authority is also involved here?
আমাদের নানা বাহিনীর আরো সোচ্চার হতে হবে যাতে সীমান্ত দিয়ে আর নারী পাচার করতে না পারে