এক নারীর মাথার চুল কেটে মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে গ্রামের লোকজন। এই ঘটনা গত শনিবার দুপুরে যশোর সদর উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের। ওই নারীকে শনিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় গতকাল রবিবার মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন রিপন হোসেন, বিউটি খাতুন, বিলকিস বেগম ও জোসনা বেগম।
ভুক্তভোগী নারী গত শনিবার রাতে জানান, তিন কন্যাসন্তান রেখে সাড়ে তিন বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। শ্বশুর তাঁর নামে ভিটার একটি অংশ ও বাড়ি লাগোয়া মুদি দোকান লিখে দেন। তিনি সেই দোকান চালান। ছয় মাস আগে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন। এই ব্যক্তি সম্পর্কে তাঁর চাচাশ্বশুর ছিলেন। এ নিয়ে প্রায় সময় বর্তমান স্বামীর বোন জাহেদার ছেলে আকতার, আজগর ও ভাই হায়দারের ছেলে রিপন এবং তাঁদের স্ত্রীরা গালমন্দ করেন। ভিটা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। এরই মধ্যে তাঁরা টিন দিয়ে দোকান আটকে দিয়েছেন। শনিবার তাঁরা গালাগাল করে লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই নারীর ঘর ভাঙতে আসেন। বাধা দিতে গেলে এক পর্যায়ে তাঁরা দম্পতিকে মারধর করেন। এরপর স্বামীকে ঘরে আটকে রাখেন। এ সময় আকতারের স্ত্রী বিউটি, রিপনের স্ত্রী জোসনাসহ কয়েকজন ওই নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মুখে কালি মাখিয়ে চুল কেটে দেয়।
অভিযুক্ত আকতার জানান, শনিবার সকালে তাঁরা বাড়ি ছিলেন না। ওই নারী তাঁদের স্ত্রীদের গালাগাল করেন। দুপুরে তাঁর ভাই আজগর বাড়িতে ফিরে এর প্রতিবাদ করতে গেলে ওই নারীর স্বামী হাঁসুয়া দিয়ে ভাইকে কুপিয়ে আহত করেন। এরপর তাঁরা গেলে তাঁদেরও হাঁসুয়া দিয়ে কোপান। তাঁরা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। কোপানোর সময় ধস্তাধস্তিতে ওই ব্যক্তির ছেলের মাথায় লাগে। আর চুল কেটে মুখে চুনকালি দিয়েছে গ্রামের নারীরা। তিনি বলেন, ‘টিন দিয়ে তাঁর দোকান বন্ধ করা হয়েছে গ্রামের মাতবরদের কথামতো। চাচাশ্বশুরকে বিয়ে করা নারী দোকানদারি করলে তাঁর মুখ দেখতে হবে, এ জন্য মাতবররা এই নির্দেশ দিয়েছেন।’
এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওই নারীর বর্তমান স্বামীর ছেলে। এ ছাড়া আরো আহত হয়েছেন পাচু মোড়লের ছেলে আজগর হোসেন ও আতকার হোসেন এবং হায়দার আলীর ছেলে রিপন হোসেন। এই গ্রামে কোনো সালিস হয়েছে কি না বা কোন মাতবর দোকান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দীন জানান, ওই নারীর শারীরিক আঘাতের চেয়ে মানসিক আঘাত গুরুতর। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ‘নির্যাতিতা নারী আইন মোতাবেক বিয়ে করে থাকলে তাঁকে এভাবে কেউ শাস্তি দিতে পারে না। কাউকে শাস্তি দিতে হলে আদালত দেবেন। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই নারী চাইলে তাঁকে আমাদের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’
যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র (গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রূপণ কুমার সরকার বলেন, ঘটনা সত্য। পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ
5 comments
যারা দোষ করে ছে তার শাস্তি পাওয়া দরকার অবিলম্বে কারণ এই রকম হলে মানুষ আর বাচতে পারবেনা। সামাজিকভাভে কাউকে বিয়ে করা অন্যায় নয়
অপরাধীদেরে শাস্তি দিতে হবেই অবশ্যই
বিধবা নারীর উপর অত্যাচার করা হয়ে তার সম্পত্তির জন্য
‘নির্যাতিতা নারী আইন মোতাবেক বিয়ে করে থাকলে তাঁকে এভাবে কেউ শাস্তি দিতে পারে না। এটা পিছনে অন্য কারণ আছে, এর বিচার হওয়া উচিত।
প্রতি হিংসার কারণে তার বসতবাড়ির দোকানটি ও বন্ধ করে দিয়েছে, জানোয়ারেরা