পাকিস্তানি বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকী। সন্ত্রাসের অভিযোগে, আল কায়েদার অপারেটিভ হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে জেল খাটছেন। তবে তার সমর্থক অনেকে মনে করেন, তিনি নিরপরাধ। তাকে অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ম্যানহাটানের এক আদালতে ২০১০ সালে তাকে অভিযুক্ত করে ৮৬ বছরের জেল দেয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, তিনি চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তাদের গুলি করা হোক। এ অভিযোগে অভিযুক্ত করার দু’বছর আগে তাকে আটক করা হয়েছিল আফগানিস্তান থেকে। এখন কেমন আছেন আফিয়া সিদ্দিকী! এ জিজ্ঞাসা অনেকের।
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এপি।
এতে বলা হয়েছে, আফিয়া সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা গুরুত্বর। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ অভিযোগ মারাত্মক। কিন্তু তার সমর্থকরা ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর আফিয়া সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থা অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করেছে বলে মনে করেন।
আফিয়া সিদ্দিকীর পক্ষে তার এক ভাইয়ের নিয়োগ করা আইনজীবী হিসেবে লড়াই করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেয়ার-হাউজটন বোর্ড চেয়ার জন ফ্লয়েড। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে ঘটনার জন্য তার মক্কেলকে দায়ী করা হয়েছে, তার জন্য তার মক্কেল আফিয়া মোটেও দায়ী নন। ড. আফিয়া, তার পরিবার এবং ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারণায় সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমরা টেক্সাসের কোলিভিলেতে কংগ্রেগেশন বেথ ইসরাইলের জিম্মি দশার তীব্র নিন্দা জানাই। একটি উপাসনালয়ে ইহুদিবিরোধী হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং প্রত্যাশা করছি আইন প্রয়োগকারী কর্র্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে জিম্মিদের মুক্ত করতে সক্ষম হবে এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দেবে।
তাছাড়া ড. আফিয়ার জন্য আমরা যারা ন্যায়বিচার চাই, তাদেরকে এর মধ্য দিয়ে অবমাননা করা হচ্ছে। পরিবার এবং ড. আফিয়ার পক্ষে আমরা অবিলম্বে জিম্মিদের মুক্তি দাবি করছি।
আফিয়া সিদ্দিকী পাকিস্তানি একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী। পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত প্রতিষ্ঠান ব্রান্ডিস ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাচাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃংখলা রক্ষাকারীদের মনোযোগ আকৃষ্ট হয় তার প্রতি। এফবিআই এবং বিচার বিভাগ তাকে আল কায়েদার একজন অপারেটিভ এবং মদতদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে ২০০৪ সালের মে মাসে। সে সময় তারা সংবাদ সম্মেলন করে গোয়েন্দাদের সতর্ক করে। বলা হয়, সামনের মাসগুলোতে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছে আল কায়েদা।
২০০৮ সালে তাকে আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষ আটক করে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, তারা ড. আফিয়ার হাতের লেখা নোট পেয়েছেন তার সঙ্গে। তাতে ‘ডার্টি বোম্ব’ বা ভয়াবহ ক্ষতিকর বোমা তৈরি নিয়ে আলোচনা ছিল বলে তাদের অভিযোগ। আরও বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানের উল্লেখ ছিল ওই নোটে। এসব স্থানকে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির জন্য হামলার টার্গেট করা হয়ে থাকতে পারে। আফগানিস্তানের পুলিশ কম্পাউন্ডের ভিতরে এক সাক্ষাতকারে কর্তৃপক্ষ বলে যে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন সেনা কর্মকর্তার এম-৪ রাইফেল কেড়ে নেন আফিয়া এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মার্কিন যে টিম দায়িত্বে ছিল তাদের প্রতি গুলি চালান।
এসব অভিযোগে ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মার্কিন নাগরিকদের হত্যা চেষ্টা। শাস্তি ঘোষণার শুনানিতে তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার বাণী দিয়ে গেছেন। বিচারকদের ক্ষমা করে গেছেন। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই তাকে লঘু শাস্তি দেয়ার জন্য তার আইনজীবীরা আহ্বান জানান। এতে নিজের আইনজীবীদের প্রতি তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি মানসিক ভারসাম্যহীন নই। ওই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই।
যুক্তরাষ্ট্রে ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে শাস্তি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন পাকিস্তানি কর্মকর্তারা। এতে দেশটির বহু শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। ওই সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ রাজা গিলানি। তিনি ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে ‘ডটার অব দ্য নেশন’ বা জাতির কন্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তাকে জেল থেকে মুক্ত করার প্রচারণা চালানোর প্রত্যয় ঘোষণা করেন। পরের বছরগুলোতে পাকিস্তানি নেতারা তাকে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তা কোনো ফল বয়ে আনেনি।
টেক্সাসের ডালাস ফোর্ট-ওয়ার্থে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সের নির্বাহী পরিচালক ফাইজান সাঈদ বলেন, তার গ্রুপটি মনে করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যে আফিয়াকে আটক করা হয়েছে। তিনি একজন রাজনৈতিক বন্দি। তাকে ত্রুটিপূর্ণ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ভুলভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি জিম্মিদশার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, কাউকে জিম্মি করা অন্যায়। হায়েনার কাজ। এর ফলে ড. আফিয়াকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা পুরোপুরি বিঘিœত হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত মিলিট্যান্টদের পক্ষ থেকেও সমর্থন পেয়েছেন ড. আফিয়া। সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে টেক্সাস ফেরার পরিকল্পনা করেছিল ওহাইওর একজন ব্যক্তি।
সে স্বীকার করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল সে। একই সঙ্গে ফেডারেল জেলে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এই জেলেই ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে মুক্ত করতে চেয়েছিল ওই ব্যক্তি। তার নাম আব্দি রহমান শেখ মোহামুদ। ২০১৮ সালে তাকে ২২ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে আটক রাখা হয়েছে টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থে একটি ফেডারেল জেলে। সেখানকার একজন বন্দি তার ওপর গত জুলাইয়ে হামলা করেছিল। এতে মারাত্মক আহত হয়েছেন আফিয়া। এ জন্য ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজন্সের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আফিয়া সিদ্দিকীর আইনজীবীরা বলেছেন, অন্য একজন বন্দি গরম এক মগ কফি আফিয়ার মুখের ওপর ছুড়ে মেরে ওই মগটি ভেঙে ফেলেছে। এ সময় তিনি কুঁকড়ে যান।
তখন অন্য একজন নারী তাকে ঘুষি ও লাথি মারে। এতে আফিয়া মারাত্মক আহত হন। তিনি এতটাই আহত হন যে, তাকে হুইলচেয়ারে করে জেলখানার মেডিকেল ইউনিটে নিতে হয়েছে। ড. আফিয়ার চোখের চারপাশ পুড়ে যায়। তার বাম চোখের কাছে তিন ইঞ্চি পরিমাণ স্থানে ক্ষত দেখা দেয়। তার বাহুতে এবং পায়ে থেঁতলে যাওয়ার দাগ হয়ে যায়। তার চিবুকে ক্ষত দেখা দেয়।
এ ঘটনায় মানবাধিকার কর্মী ও ধর্মীয় অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা জেলখানার পরিবেশ উন্নত করার দাবি জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সুত্রঃ মানবজমিন
8 comments
আমরা এখনো মা,বোন আফিয়া সিদ্দিকা মত শক্ত ইমানি মুসলিম হতে পারেনি.আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক
মুসলমানরা যদি আজ এক না হয় তাহলে মুসলমান জাতির উপর অনেক দুখ আছে। তাই মুসলমানরা যাতে এক থাকে সেই আশাই করি
One can rarely find such a beautiful reciter of the Quran and highly qualified like Dr Aafia Siddiquie. O Allah make my daughters like her! Ameen
I proud on Doctor Aafia Siddiqui .
ডঃ আফিয়া সিদ্দিকী বোন আপনাকে জানাই হাজার হাজার সালাম আপনাকে আল্লাহ তায়ালা জেন মা ফাতেমা সাথে জান্নাত বাসী করেন আমীন
We know her case. Morally corrupt Us state, and they are worried about women’s rights in Afghanistan! How hypocritical
How can one be so cruel. This has to end. It’s been years we keep hearing about her but no one literally no one in power is man enough to stand and do something for an oppressed soul who’s being tortured for years.
There was once a time when the leaders & men of this ummah would fight across countries to free one captured sister. How our ummah has fallen. May Allah swt alleviate your situation my sister in Deen.