১৩ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা ইন্দোনেশিয়ার এক আবাসিক মাদ্রাসার মালিক তথা শিক্ষককে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের প্রতি হেরি উইরাওয়ান নামে ওই ব্যক্তির নির্যাতন ইন্দোনেশিয়ার মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।
হেরি উইরাওয়ান ২০১৬ সাল থেকে উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল।এমনকী তারা নয়টি সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
কৌসুলিরা আদালতের কাছে আসামীর মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছিলেন। তবে মঙ্গলবার বান্দুং জেলা আদালতের বিচারকদের একটি বেঞ্চ ৩৬ বছর বয়সী হেরি উইরাওয়ানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তারা উইরাওয়ানকে রাসায়নিক প্রয়োগে নপুংসক করে দেওয়ার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা নির্যাতনের বিষয়টি গত বছরের মে মাসে ধরা পড়ে। একজন ভুক্তভোগীর বাবা-মা তাদের সন্তান গর্ভবতী এটা জানার পরার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
উইরাওয়ান পশ্চিম জাভার বান্দুং শহরে আবাসিক মাদ্রাসা খুলে ২০১৬ সাল থেকে তার ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন।
স্থানীয় মিডিয়ার খবর অনুসারে, উইরাওয়ান দরিদ্র এলাকার শিক্ষার্থীদের বৃত্তি এবং অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে তার শিক্ষায়তনে আকৃষ্ট করেন। সেখানকার নিজেদের পরিবার থেকে দূরে ও নিয়মিত যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল এবং বছরে মাত্র একবার বাড়ি যেতে দিত।
ইন্দোনেশিয়ার সরকার প্রতিজন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীকে সাড়ে আট কোটি ইন্দোনেশীয় রুপিয়া (প্রায় ৬ হাজার ডলার) পর্যন্ত করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানিয়েছে।
উইরাওয়ানের মামলাটি বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় যৌন সহিংসতা এবং নারী নির্যাতনের হার নিয়ে নতুন করে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এ থেকে দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা যৌন সহিংসতা নির্মূল বিল প্রণয়ন করার আহ্বানও জোরদার হয়েছে। দেশটির নারী অধিকার কর্মীরা প্রায় এক দশক ধরে আইনটি প্রণয়নের জন্য লবিং করে আসছেন। তবে রক্ষণশীল আইন প্রণেতাদের জন্য আইনটির প্রণয়ন বিলম্বিত হচ্ছে। বিলটির লক্ষ্য যৌন হয়রানি, বৈবাহিক ধর্ষণ এবং অন্যান্য ধরনের যৌন সহিংসতাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা। অনেক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ইসলামি দলের যুক্তি, বিলটি বহুগামিতাকেও উসকে দেবে। তবে বিলের সমর্থকরা ওই দাবিটি নাকচ করে দিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি, কালেরকন্ঠ