কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরূপ প্রভাব শিশুদের জীবনে পড়েছে। নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বাল্যবিয়ের মতো ঘটনাগুলো বেড়েই চলছে। করোনা পরিস্থিতিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাইরেও শিশুদের উপস্থিতি একেবারে নেই বললেই চলে। এরপরও ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে; গত এক বছরে সারাদেশে ৮১৮ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৯৪ শিশুকে। এ ছাড়া দেশে ৪৩ হাজার ৫৪টি বাল্যবিয়ে হয়েছে।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকারবিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহিবুজ্জামান। যুক্ত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা বিলকিস প্রমুখ।
এমজেএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৬২৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। আর ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮১৮। ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে ১৪ জন মেয়েশিশু। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০ জন শিশু। অবনতিশীল শিশু পরিস্থিতি থেকে এটি সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের শিশুরা তাদের ঘরেই নিরাপদ নয়। অধিকাংশ শিশু-ধর্ষণ পারিবারিক পরিবেশে পরিচিতদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। একইভাবে পারিবারিক কারণেই বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে।
প্রকাশিত রিপোর্টগুলো আধেয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পরিবারের পরিচিত লোকদের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছাড়াও, প্রতিবেশীদের হাতে শিশুদের একটি বড় অংশ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন বয়স ২ বছর। বেশির ভাগ শিশু খেলতে গিয়ে লোভ দেখিয়ে পরিচিতদের মাধ্যমে ধর্ষণ করা হচ্ছে। মূলত কম বয়সি শিশুরাই ধর্ষণের শিকার বেশি হচ্ছে। কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রেম করতে গিয়ে। স্কুল এবং মাদ্রাসা ছাত্রীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিক্ষক এবং মাদ্রাসার হুজুরদের হাতে।
ধর্ষণের পাশাপাশি এ সময় ভয়াবহ হারে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। ২০২১ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ৮৭টি খবর থেকে, স্কুলগুলো খোলার পরপর ৪৩ হাজার ৫৪টি বাল্যবিয়ের সংবাদ পাওয়া গেছে। আর ২০২০ সালে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিল ১০১টি শিশু।
বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছে ৭৮ শিশু। এর মধ্যে ৫৭ ছেলে এবং ২১ মেয়েশিশু। ২০২০ সালে আত্মহত্যাকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৪ জন এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ২৩ জন। আত্মহত্যার কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গেছে, মূলত পরীক্ষায় ফল-বিপর্যয়, পরিবারের ওপর রাগ, প্রেম, উত্ত্যক্ত হয়ে, ধর্ষণের শিকার বা ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণের বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়া এবং সাইবার ক্রাইম বা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
বিভিন্ন কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৮৩ জন শিশু এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৫টি শিশুকে। ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয়েছিল ১৪৫ জন শিশু। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হওয়ার সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় কমেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২০ সালে ১৫৮ জন আর ২০২১ সালে ৬৯ জন শিশু নিহত হয়েছে। নানা ধরনের নির্যাতনে আহত হয়েছে ২৫৪ জন শিশু। হারিয়ে গেছে ৩৮ শিশু। পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৭০ জন শিশু। ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল ১৬৫ শিশুর। নিখোঁজ হয়েছে ৩৮টি শিশু। ২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২২ জন শিশু।
শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে ও সার্বিক শিশু সুরক্ষায় সামাজিকভাবে করণীয় প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়, সার্বিকভাবে শিশুর সুরক্ষায় বিশেষ করে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে শিশুরা কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারে সেই করণীয় বিষয়ে ঘর থেকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি শিশু-কিশোর ধর্ষণ ঠেকাতে জনসচেতনতা জরুরি। সবার আগে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শের পার্থক্য বোঝাতে হবে। আত্মীয় ও পরিচিতজনদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সুত্রঃ ভোরের কাগজ
4 comments
১বছরের কন্যা শিশু থেকে ৬০বছরের মহিলা কেউ ই সুরক্ষিত না। খুবই দুঃখজনক দেশের অবস্থা দেখার মতো কেউ নেই
সঠিক বিচার-ব্যবস্থা না হলে আরও ভয়াবহ হবে কোন শিশু বা নারী একা ঘর থেকে বের হতে পারবে না
সরকারের উপর হামলা হলে ফাঁসি আর সাধারণ মানুষের উপর হামলা হলে বিচার হয় না । আমি একজন বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে চাই ধর্ষণের বিচার ফাঁসি ।
দেশে সঠিক বিচার না থাকায় এমন ঘটনা বেশি হচ্ছে, ধর্ষকের বিচারের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে মৃত্যু দন্ড দেওয়ার আইন করা দরকার