নেই কোনো এতিম শিশু, তবুও চলছে এতিমখানা। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এতিমখানার নামে বরগুনায় সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। চিহ্নিত ওই প্রতারক চক্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের এই মহোৎসব বন্ধ করতে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান।
বরগুনায় সরকারের তালিকাভুক্ত ১২৪টি এতিমখানা রয়েছে। এসব এতিমখানায় এতিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে দুই হাজার ৩৮৮ জন। বাস্তবতা সেখানে পুরোটাই ভিন্ন। এসব এতিমখানার নামে নানা কৌশলে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শক্তিশালী একটি চক্র। এভাবেই প্রতিবছর এই চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে সরকারের প্রায় ছয় কোটি টাকা। বরগুনা জেলার সরকারি তালিকাভুক্ত বিভিন্ন এতিমখানায় অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রার্ষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের তথ্যচিত্র।
বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া হাশেমিয়া শিশু সদনে, শুরুর দিকে কয়েকজন এতিম শিক্ষার্থী দেখানো হলেও গত সাত-আট বছর ধরে একজনও এতিম শিশু নেই এ এতিমখানায়। এই সময়ে এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো রান্না হয়নি। নেই কোনো বাবুর্চিও। তবুও কাগজপত্রে ৩৮ জন এতিম শিক্ষার্থী দেখিয়ে ১৯ জনের অনুকূলে বছরে সরকারের সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি। সরকারি অর্থের এমন দুর্নীতি লুকাতে সম্প্রতি এতিমখানাটির সাইনবোর্ড পাল্টে রাখা হয়েছে আঙ্গারপাড়া ইসলামিয়া শিশু সদন।
আঙ্গারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কবির দফাদার আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, সরকারি কি অনুদান পায় না পায় তা আমরা জানি না। তবে গত সাত-আট বছরে এখানে আমরা কোনো এতিম শিশু থাকতে দেখিনি। এখানে কাউকে রান্নাও করতে দেখিনি। একই কথা বলেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম।
অথচ আঙ্গারপাড়া ইসলামিয়া শিশু সদন তত্ত্বাবধায়ক দুলাল দফাদার জানান, তার এখানে নিয়মিত রান্না হয়, বাবুর্চিও আছেন। তার দাবি কয়েকদিন হলো এতিম শিশুরা বাড়ি বেড়াতে যাওয়ায় আপাতত রান্না-বান্না বন্ধ রয়েছে। বরগুনা শহরের মাদরাসার সড়কের নেছারিয়া শিশু সদনে কাগজপত্র আর সাইনবোর্ডের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। সুকৌশলে বরগুনার দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদরাসার আবাসিক ছাত্র হোস্টেলটিকেই দেখানো হচ্ছে নেছারিয়া শিশু সদন নামে। অথচ সেখানে থাকছে মাদরাসাটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যাদের অধিকাংশই থাকা-খাওয়ার খরচ দিয়ে থাকছে সেখানে। কাগজপত্রে এই এতিমখানাটিতে ৮৪ জন এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। সরকারের নিয়মানুযায়ী মোট এতিম শিশুর অর্ধেক অর্থাৎ ৪২ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য জনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে হিসাবে ৪২ জন শিক্ষার্থীর অনুকূলে প্রতি মাসে ৮৪ হাজার টাকা এবং বছরে ১০ লাখেরও বেশি টাকা তুলে নিচ্ছে একটি চক্র। অথচ বাস্তবে পাঁচজন এতিম শিশু নেই এখানে।
বরগুনার দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মামুন-অর-রশীদ এতিম শিশু না থাকার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তাদের এ এতিমখানায় এতিম শিশু ও অসহায় শিশু রয়েছে। তাদেরকে তারা নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করে আসছেন।
বরগুনা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক কাজি মো. ইব্রাহিম বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম যে হচ্ছে না সে কথা বলা যাবে না। এসব অনিয়ম বন্ধে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান আরটিভি নিউজকে বলেন, ক্যাপিটেশন গ্রান্টপ্রাপ্ত (এতিমখানা সমূহের শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়) এতিমখানায় আমরা ইতোমধ্যে সার্ভে করেছি এবং প্রকৃত এতিমের তালিকা করেছি। সে অনুযায়ী তাদেরকে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি।
3 comments
এতিমখানার নামে গরীব অসহায় এতিম শিশুদের বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। বছরের পর বছর এতিম শূন্য থাকলেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দ তুলে নিচ্ছে তারা। অবশ্য সমাজসেবা কর্তৃপক্ষের দাবি, বিভিন্ন চাপের মুখে বরাদ্দ দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
এতিম শিশুরা নাকি ছুটিতে আছে বলে এতিমখানা পরিচালকরা দাবি করলেও এলাকাবাসী বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বন্ধ এগুলোর কার্যক্রম। এদের বিচারের আওয়তা আনা হোক
বরগুনার দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মামুন-অর-রশীদ এতিম শিশু না থাকার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তাদের এ এতিমখানায় এতিম শিশু ও অসহায় শিশু রয়েছে। তাদেরকে তারা নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করে আসছেন। এতে বোঝা অধ্যক্ষ কত বড় মিথ্যাবাদী ও প্রতারক