কাকডাকা ভোরেই ঘুম ভাঙে রাশেদা, শাহানা, জবেদা ও মাফুজার মতো শ্রমজীবী নারীর। ঘর সামলে সকাল সকাল জীবিকার তাগিদে ছুটতে হয় তাদের। কেউ যান ইটের ভাটার কাজে, আবার কেউ কেউ কৃষিকাজ করেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে হাড়ভাঙা খাটুনি। সংসারের অভাব ঘোচাতে নিত্যদিন শ্রম বিক্রি করেন তারা। পুরুষের সমান হারে কাজ করলেও তাদের ভাগ্যে জোটে অর্ধেক মজুরি।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে নারী শ্রমিকদের এমন দুর্গতি। ক্ষেত থেকে মরিচ ও ভুট্টা তোলার কাজ করেন দুই-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক। এসব কাজে পুরুষ শ্রমিকের মজুরি জনপ্রতি ৪০০ টাকা। সেখানে একজন নারী শ্রমিককে দেওয়া হয় ২০০ টাকা। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে চলা আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে নিহত হন বেশকিছু শ্রমিক। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৮৮৯ সালে মে মাসের প্রথম দিনকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ঘোষণা করে ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর ওয়ার্কার্স অ্যান্ড সোশ্যালিস্ট’। অথচ আজও বৈষম্য শেষ হয়নি শ্রমিকদের।
উপজেলার পূর্ব কাজলাপাড়া গুচ্ছগ্রামের নারী শ্রমিক হাছনা, আমফুল, অজফা ও মজি বেগম জানান, অভাবের সংসার, এ বাজারে একজনের আয়ে সংসার চালানো কঠিন। বাধ্য হয়ে পুরুষের পাশাপাশি তারাও শ্রম বিক্রি করছেন। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও তারা অর্ধেক মজুরি পান। একই ধরনের অভিযোগ করেন পোল্যাকান্দি গ্রামের নারী শ্রমিক রহিমা, সহিলে ও জাহিতন।
পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার কৃষক কফিল উদ্দিন জানান, মরিচ ও ভুট্টা তোলার কাজ করেন দরিদ্র নারীরা। স্বামীর আয়ে তাদের সংসার চলে না। বাধ্য হয়েই শ্রম বিক্রি করেন তারা। কিন্তু খুব কম মজুরি পান।
ময়ভান ও ফজিলে বলেন, তাদের স্বামী নেই। ছেলেদের আলাদা সংসার। তাদের সংসারেও অভাব। এ কারণে অর্ধেক মজুরিতেই কাজ করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, জীবিকার জন্য কঠোর সংগ্রাম করতে হয় এ অঞ্চলের নারী শ্রমিকদের। ক্ষেত-খামারে ধুলাবালুর মধ্যে কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। প্রায়ই জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনিতে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগান দেওয়া কঠিন। তার ওপর রোগ হলে তা দুঃস্বপ্নের মতো।
মধ্যেরচরের নারী শ্রমিক আয়শা, কদভান, লাইলি, মনোয়ারা ও তারা ফুল জানান, সারাদিন ধুলাবালুতে কাজ করায় সর্দি-কাশি হয়, শরীরে জ্বর-জ্বর ভাব থাকে। কোনো কিছু খেতে ভালো লাগে না। শরীর ব্যথা করে। অভাবের সংসার, কাজ না করে উপায় কী?
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবীব জানান, পুরুষের মতো নারীর শরীর ধুলাবালুতে শ্রম সহনীয় নয়। ফলে বেশিরভাগ নারী শ্রমিক প্রাণঘাতী সিলিকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
সুত্রঃ সমকাল