শরীয়তপুরের ডামুড্যা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রথি কান্ত মিস্ত্রীর বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে স্থানীয় দুই সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন তিনি।
বুধবার (১৭ আগস্ট) সকাল থেকে এমন একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা গেছে।
এছাড়া সহকারী শিক্ষক রথি কান্ত মিস্ত্রী ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অডিও ক্লিপও ভাইরাল হয়েছে।
সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও ওই বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রথি কান্ত মিস্ত্রী ওই স্কুলের কৃষি শিক্ষা ও স্কাউট বিষয়ক সহকারী শিক্ষক। সেই সুবাদে তিনি স্কাউটিং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে স্কাউটদের সাপ্তাহিক মিটিং ছিল। কোন কারণ ছাড়াই রথি কান্ত মিস্ত্রী সে মিটিং বাতিল করে দেন। পরে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে বলে ওই ছাত্রীকে স্কুলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। তারপর সেখানে ওই ছাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন রথি কান্ত মিস্ত্রী। এই বিষয়টি শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকারকে জানালে তিনি বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
যৌন হয়রানির বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় ও শাহাদাৎ হোসেন শিক্ষক রথি কান্ত মিস্ত্রীর মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ করেননি। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিষয়টি জানতে প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকারের কাছে যান ওই সাংবাদিকরা। কিন্তু বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে বলতে রাজি হননি প্রধান শিক্ষক। তাই সাংবাদিকরা চলে আসেন। রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয়ের মোবাইলে কল করেন প্রধান শিক্ষক। হৃদয় কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালি করেন সুজিত কর্মকার। এছাড়া দুই সাংবাদিককে মারধরের হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার বলেন, সাংবাদিকেরা ডিস্টার্ব করছে, এলোমেলো কথা বলছে। তাই আমার মন ভালো ছিল না। সাংবাদিক মানুষ তাদের এভাবে বলা ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষক রথি কান্ত মিস্ত্রীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক রথি কান্ত মিস্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ আছে।
এদিকে স্থানীয় সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, তথ্য চাওয়া আমাদের অধিকার। কিন্তু তথ্যতো পাইনি উল্টো আমাদের হুমকি ও গালাগালি করেছে প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার। আমরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র শর্মা বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। শিক্ষকরা যে কাজটি করেছে, বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করবো। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাছিবা খান বলেন, সহকারী শিক্ষকের বিষয়ে আমি শুনেছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের হুমকি ও গালাগালি করেছে জেনেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুত্রঃ আরটিভি নিউজ