খুলনায় বিয়ের কথা বলে প্রতারণা, ধর্ষণ ও গর্ভের দুটি ভ্রূণ নষ্টের অভিযোগে পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এসআই) মো. কাজী আকরাম হোসেনের (৫৩) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) নগরীর লবণচরা এলাকার বাসিন্দা একজন নারী বাদী হয়ে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে (৩ নম্বর) মামলাটি দায়ের করেন। এভাবে ৮ বছর ধরে বিভিন্ন সময় তাকে ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।’
অভিযুক্ত এসআই কাজী আকরাম হোসেন বর্তমান কেএমপির খুলনা সদর থানায় কর্মরত রয়েছেন। তিনি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার শ্যামবাগাত গ্রামের যশোর আলী কাজীর ছেলে। এর আগে তিনি নগরীর লবণচরা থানায় কর্মরত ছিলেন।
এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেন, আসামি এসআই আকরাম নগরীর লবণচরা থানায় কর্মরত থাকাকালীন ২০১৪ সাল থেকে তার সঙ্গে পরিচিত। এরই সূত্র ধরে তিনি তাদের নগরীর লবণচরা এলাকার বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে তিনি বাদীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। সে মোতাবেক ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাতে একজন হুজুরসহ তার বাড়িতে হাজির হন। এরপর হুজুর মুসলিম শরিয়া মোতাবেক তাদের বিয়ে পড়ান।
তারপর তাকে বিয়ে রেজিস্ট্রি করার কথা বললে তিনি বলেন, আমি পুলিশে চাকরি করি। এই মুহূর্তে রেজিস্ট্রি কাবিন করলে চাকরিতে অসুবিধা হবে। এরপর থেকে আসামি আকরাম বাদীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাদী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিষয়টি তাকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তাকে ফোন করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বলেন, ‘কিসের সন্তান, কিসের বউ, তুই আমার বউ হলি ক্যামনে, তোকে কি আমি বিয়ে করেছি?’ এই বলে ফোন রেখে দেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বিয়ে হওয়ার পর এবং সর্বশেষ গর্ভকালীন সময়ে আসামির অপচেষ্টায় বাদীর পেটের দু’টি বাচ্চা নষ্ট করা হয়। বর্তমানে বাদী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট ফোন করলে স্বামী এসআই আকরাম তার বাড়িতে এসে গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন নবজাতক সন্তানের জন্য খরচ চাইলে ‘তুই আমার বউ না, সন্তান আমার না, তাহলে তোকে খরচ দেবো ক্যান? যদি এই নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করিস তাহলে তোকে এনকাউন্টার করে দেবো। আসামি এসআই আকরাম স্বামী সেজে বাদীকে ২০১৪ সাল থেকে ধর্ষণ করে আসছে বলেও মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এবিষয়ে খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, ‘এসআই কাজী আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে এক নারী আদালতে মামলা করেছেন বলে শুনেছি। তবে, আমি এখনো এই সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট পাইনি। পাইলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক