জামালপুরে যে উত্ত্যক্তকারীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সুইসাইড নোট লিখে কিশোরী আত্মহত্যা করেছে, সেই অভিযুক্তকে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন।
র্যাব-১৪ স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, শনিবার মধ্যরাতে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার চরশসা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ওই ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে বলে তিনি জানান।
জামালপুরের মেলান্দহ থাকার ওসি এম এম ময়নুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”ওই ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মেয়েটির বাবা অভিযুক্ত তামিম আহমেদ স্বপন খানের বিরুদ্ধে গতকাল রাতে মামলা করেছিলেন। র্যাব তাকে গ্রেপ্তারের পর আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।”
করুণ ও হৃদয়স্পর্শী মেয়েটির দুটি নোট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে অনেককে আবেগপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
যে কারণে আত্মহত্যা করলো কিশোরী মেয়েটি
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়তো কিশোরী মেয়েটি।
বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ঘরের কড়িকাঠের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার করে করে স্বজনরা।
সেই কক্ষ থেকে তার হাতে লেখা দুটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়।
সেখানে ওই গ্রামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তাকে (মেয়েটিকে) দীর্ঘদিন ধরে সে উত্যক্ত করে আসছে বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়। ওই দিন ছেলেটি একটি কক্ষে তাকে আটকে রেখে খারাপ কাজ করেছে বলে নোটে উল্লেখ করেছে।
সেখানে সে লিখেছে, ” আমারে …. চেয়ারম্যানের ভাতিজা আজকের দিনে এক রুমে কাটাইছে। পারলে ক্ষমা করো”।
“মা-বাবা তোমরা ভালো থেকো। আমারে ভুলে যেও। আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের সম্মান শেষ হয়ে যেত। বাবা-মা আবার বলতেছি, ভালো থেকো। বাবা-মা ভালো থেকো। গুড বাই, সোনা বাবা-মা।”
সেখানে সে লিখেছে, ”ও আমারে খুব ডিস্টার্ব করতো। আমাকে বলছে যে, ওর সাথে দেখা করলে ও আমার জীবন থেকে চলে যাবে। কিন্তু ও আমার সাথে খুব খারাপ কিছু করছে বলার মতো না।”
মেয়েটির বাবা আবু সাঈদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে এসে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু সন্ধ্যায়ও তাকে ঘুম থেকে উঠতে না দেখে তার মা সেই কক্ষে গিয়ে দেখতে পান, বিছানার ওপর আড়ার সাথে তার দেহ ঝুলছে।
তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে মেলান্দহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
আবু সাঈদ বলছেন, অভিযুক্ত তরুণটি বিভিন্ন সময় তার মেয়ের স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিরক্ত করতো। এ নিয়ে তার অভিভাবকদের কাছেও বিচার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোন সমাধান হয়নি।
বৃহস্পতিবার মেয়েটি বাসায় আসার পথে ওই তরুণ তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এরপর বাসায় ফিরেই মেয়েটি আত্মহত্যা করে।
এই বিষয়ে বিবিসি অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। তবে কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
শুধু আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা কেন?
মেয়েটি মৃত্যুর আগে চিরকুটে উল্লেখ করে গেছে, তার সাথে’ খুব খারাপ কিছু’ করায় সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
সেক্ষেত্রে শুধু আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা কেন নেয়া হয়েছে?
জানতে চাইলে ওসি এম এম ময়নুল ইসলাম বলছেন, ”চিরকুটের বক্তব্যের কারণে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন মেয়েটির বাবা। আমাদের তদন্তে বাকি সব কিছুই বেরিয়ে আসবে।”
”ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে এবং আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা পুরো ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারবো। তখন প্ররোচনা ছাড়াও অন্য বিষয় থাকলে সেটাও পরবর্তীতে মামলায় যুক্ত করা হবে।”
জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসে বিবিসি বাংলাকে বলছেন, মেয়েটির ওপর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলেই আমরা ধারণা করছি। হয়তো এই কারণে মেয়েটি অপমান সহ্য করতে না পেরে বা লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এক বছরে ধর্ষণের শিকার ৮১৮ জন, আত্মহত্যা ৭৮ শিশুর
বাংলাদেশের মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন গত মাসেই একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১৮টি শিশু। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৬২৬।
নানা কারণে ৭৮টি শিশু আত্মহত্যা করেছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব কারণে শিশুরা আত্মহত্যা করেছে বা করার চেষ্টা করেছে, তার মধ্যে উত্যক্ত হওয়া, ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার শিকার, ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়া এবং সাইবার ক্রাইম বা ব্ল্যাক মেইলের শিকার হওয়ার মতো ঘটনা রয়েছে।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা