‘মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স’। লাইসেন্সধারী একটি এজেন্সি। কিন্তু তারা চাকরির নামে প্রতারণা ও অসহায় নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে অবৈধকাজ ও নির্যাতন করে আসছিল।
এজন্য নারীদের বিদেশে পাঠানোর আগে একটি কাগজে সই করিয়ে নিতো এজেন্সি। যাতে লেখা থাকতো- ‘বিদেশ যাওয়ার পর কোথাও কোনো অভিযোগ করবো না এবং সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করবো না।’
আর এজন্য এজেন্সিটি এমন সব অসহায় মানুষকে টার্গেট করতো যাদের বলার কোনা জায়গা নেই। এমনই সৌদি আরব পাঠানো দুই নির্যাতিতা নারী গৃহকর্মীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে র্যাব। অবৈধপথে তাদের সৌদি পাঠিয়েছিল লাইসেন্সধারী এজেন্সিটি।
শনিবার (১৩ আগস্ট) রাতে ওই দুই ভুক্তভোগী নারী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন।
র্যাব জানায়, প্রতারক ওই এজেন্সি কোনো ঝামেলা হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না এমন চুক্তিও করেছিল ভুক্তভোগীদের সঙ্গে। সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হতো।
এরই মধ্যে মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্সের মালিকসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানায় র্যাব।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কনকর্ড অ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি। প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামীর সংসারে নির্যাতিত নারীদের টার্গেট করে বিদেশে ভালো বেতন ও বিনামূল্যে হজ করার প্রলোভন দেখাতো। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নারীশ্রমিককে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে তারা। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর প্রতিশ্রুতির কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হতো না বরং বিভিন্ন অবৈধকাজে বাধ্য করা হতো নারীদের।
সম্প্রতি কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর পল্টনে সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে এজেন্সির মালিক আবুল হোসেন (৫৪) ও তার সহযোগী আলেয়া বেগমকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, দেশে ফেরত আসা ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে নয় মাস এবং আরেকজনকে ছয় মাস আগে সৌদি আরব পাঠানো হয়। মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স এজেন্সির সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল, সৌদি গিয়ে চাকরি পাবেন। কিন্তু সৌদি পৌঁছানোর পর তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। কাজের নামে চালে অমানবিক নির্যাতন।
এই নারীদের একজন মাত্র তিন মাসের বেতন পেয়েছেন। বাকি মাসগুলো তার ওপর নির্যাতন চলে। আর আরেকজন নারী দুই মাসের বেতন পান।
ভুক্তভোগী একজন নারী বলেন, তাকে আটকে রেখে মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে। পরে একজন বাঙালির সহায়তায় তার স্বামীর কাছে বিষয়টি জানানো হয়।
ওই নারী বলেন, অনেক মানুষ নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আপনারা যদি পারেন তাদের সাহায্য করেন।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, সৌদি আরবে বিক্রির প্রস্তুতি চলছিল ওই নারীদের। এমন আরও প্রায় ৯০ জন আছেন একই দুরবস্থায়।
আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, এজেন্সির কাগজপত্র সব ঠিক আছে। কিন্তু তারা এই ধরনের অনৈতিক ও বেআইনি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাঠাচ্ছে মানুষ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে আরও যারা এসব কাজ করছে তাদের ওপর কড়া নজরদারি চলছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এজেন্সির সই করা চুক্তিনামায় ভুক্তভোগীদের আইনি কোনো জটিলতা হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ও ভুক্তভোগীর পরিবার। আমরা ভুক্তভোগীদের পাশে থেকে গাইড করবো এবং তারা আইনি সহায়তা পাবেন।
সুত্রঃ জাগো নিউজ