ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জিন তাড়ানোর নামে কবিরাজের অপচিকিৎসায় লিমা আক্তার তামান্না নামে এক মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের বাঁশহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত লিমা আক্তার তামান্না (১৪) ওই গ্রামের মো. আব্দুর রশিদের মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, কবিরাজ আমেনা বেগম (৪৫) নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বাঁশহাটি গ্রামে মেয়ের জামাই মো. রমজান মিয়ার বাড়িতে থেকে কবিরাজি করতেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন স্থানীয় জালাল ও কাশেম।
তামান্নার বাবা আব্দুর রশিদ জানান, বেশ কিছুদিন ধরে কোমর ব্যথার কথা জানায় তামান্না। পরে ওষুধ খাওয়ালে সুস্থ হয়। কয়েকদিন পর আবারও কোমর ব্যথা শুরু হয়। এ সময় কোমর ব্যথা ছাড়াও শরীর দুর্বল, মাথা, শরীর ব্যথা ও খিচুনি হতো। পরে কবিরাজ আমেনা বেগমের দুই সহযোগী জালাল ও কাশেম তার মেয়ের চিকিৎসা করবে বলে জানান। প্রথমদিন তামান্নাকে নিয়ে কবিরাজের বাড়িতে প্রায় চার ঘণ্টা ঝাড়ফুঁক দেওয়া হয়। কবিরাজ জানায় তামান্নাকে জিনে ধরেছে। এতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত সোমবার রাতে দুই সহযোগী নিয়ে বাড়িতে এসে চিকিৎসা চালান কবিরাজ আমেনা।
তিনি বলেন, সোমবার রাতভর তামান্নার মুখ চেপে ধরে নাক দিয়ে আগরবাতি ও কাপড় পোড়া ধোঁয়া দেওয়া হয়। এতে তামান্না জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় জিন চলে গেছে বলে কবিরাজ ও তার দুই সহযোগী চলে যান। তামান্নার জ্ঞান না ফেরায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পথে তামান্নার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, আমেনা বেগম বাঁশহাটি গ্রামে মেয়ের জামাই রমজান মিয়ার বাড়িতে থেকে কবিরাজি করতেন। এই কাজে তাকে সহায়তা করতেন স্থানীয় জালাল ও কাশেম। জিন তাড়ানোর কথা বলে সোমবার সারারাত ওই মেয়ের মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে আগরবাতি ও কাপড় পুড়িয়ে ধোঁয়া দেন তারা। এতে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সকালে মেয়ের বাবা আমাকে মোবাইলে বিষয়টি জানালে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিই। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেন। সেখানে নেওয়ার পথে মারা যায় তামান্না।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাসিনুর রহমান বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই তামান্নাকে দাফন করেছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় স্বজনরা অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন