রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকেল ইন্সটিটিউটের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকেল ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. এজাবুর আলম (৩৫)। তিনি জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (সিভিল উড) বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকেল ইন্সটিটিউটের শিক্ষক।
সুইডেন পলিটেকনিকেল ইন্সটিটিউটের সিভিল উড বিভাগের ভুক্তভোগী ছাত্রী অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘শিক্ষক মো. এজাবুর আলম বিগত দুই মাস যাবত আমার ব্যক্তিগত ম্যাসেঞ্জার আইডিতে তার ‘এজাবুর আলম’ আইডি থেকে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা প্রলোভন দেখিয়ে যেমন, আমাকে পরীক্ষায় ভালো নাম্বার, পরীক্ষা পাসের ব্যবস্থা, হোস্টেলে রুমের ব্যবস্থা করে দিবে বলে আমার ম্যাসেঞ্জার আইডিতে নানা রকম কু-রুচিপূর্ণ অশালীন কথা বার্তা বলেন। আমাকে প্রতিনিয়ত বিরক্ত এবং ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি তার এই কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে আমাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হেনস্তা করার জন্য রীতিমত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন’।
ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, ‘আমাকে এই শিক্ষক বহুদিন ধরে নানা রকম কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। আমি বিরক্ত হয়ে গত ২৭ আগস্ট অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ করেছি। পরে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আমাকে তদন্ত কমিটি ডাকলে আমি গিয়ে তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তা খুলে বলি। পরে আমাকে তদন্ত কমিটি জানান, আমি জেনো পরের বার ইন্সটিটিউটে গেলে অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে যাই। এ দিকে অভিযুক্ত শিক্ষক গত ২ সেপ্টেম্বর আমার বাবার অফিসে গিয়ে সমঝোতার জন্য প্রস্তাব দেন।
আলমের যৌন হয়রানীর ভুক্তভোগী হয়ে এ প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়া ৫২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী কৃষ্ণা চাকমা (ছদ্মনাম) জানান, আমি এ প্রতিষ্ঠানের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম। ২০১৮ সালে আমার প্রথম সেমিস্টার চলাকালে এই শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে ফেসবুকে যুক্ত করেন এবং ম্যাসেঞ্জারে নানান রকম কু-রুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন। আমার কাছে তিনি শরীরের নানান অংশের ছবি দিতে বলতেন। নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে রাতে তার বাসায় যাওয়ার জন্য বলতেন। তার বিরক্ত সহ্য করতে না পেরে, আমি অভিযোগ করবো বল্লে তিনি আমাকে এখানে থাকতে দিবেন না এবং উল্টা আমার নিজের সম্মান নষ্ট হবে বলে জানান।
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, একদিন রাতে তিনি আমাকে বাসার নিচে আসতে বলেন তিনি আমার বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। পরে আমি নিচে আসলে আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাতাহাতি করার চেষ্টা করলে আমি পালিয়ে চলে আসি। পরে সেবার আমি প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে পারিনি। পরে দিয়েছিলাম, এভাবে দিনের পর দিন তিনি আমাকে হেনস্তা করতে থাকলে আমি তৃতীয় সেমিস্টারে পরীক্ষা না দিয়ে পরিবারের পরামর্শে চট্টগ্রাম চলে আসি। বর্তমানে আমি এখানে একটি বেসরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হয়েছি। আমার জীবনের তিনটা বছর নষ্ট করেছে এ শিক্ষক, আমি তার উচিত বিচার চায়।
৫১তম ব্যাচের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করে জানান, এ শিক্ষক আগের থেকে মেয়েদেরকে এরকম কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। একবার তার ওপর বিরক্ত হয়ে আমি তাকে বলেছিলাম ‘আপনার কয়টা মেয়ে লাগবে, আমি এনে দিব। ছাত্রীদের সঙ্গে এ কেমন ব্যবহার আপনার’। তার বিরুদ্ধে সেবার অধ্যক্ষকে অভিযোগ করলে, তিনি দেখবেন বলে আর কিছু করেননি। আমরা বর্তমান ও প্রাক্তন সকল শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষকের বিচার চাই।
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকেল ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি অভিযোগ পাওয়ার পরে গত ৩০ আগস্ট সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এ কমিটি আমাকে সাত কর্ম-দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্রঃ আরটিভি