জয়পুরহাট সদর উপজেলায় একটি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে যৌন হয়রানির অভিযোগে দুজন শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রীর বাবার করা মামলায় ওই শিক্ষকদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতার শিক্ষকেরা হলেন মাদরাসাটির কারি রেজাউল করিম (৫৫) ও সহকারী শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম (৩০)।
মামলার এজাহার ও মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী ২৩ আগস্ট সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাদরাসায় যায়। ১১টা ২০ মিনিটের দিকে শ্রেণিকক্ষে কারি শিক্ষক রেজাউল করিম ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। একই দিন ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় সহকারী শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামও ওই ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। মাদরাসা থেকে বাড়িতে ফিরে বিষয়টি জানালে পরদিন ছাত্রীর বাবা বিষয়টি মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে জানান। এরপর ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে মাদরাসায় জরুরি বৈঠক ডাকেন সভাপতি। বৈঠকে মাদরাসার শিক্ষকদের পাশাপাশি গ্রামের একদল লোক উপস্থিত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈঠক চলাকালে গ্রামের লোকজন অভিযুক্ত শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামকে মারধর শুরু করেন। প্রায় আধঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হলে মাদরাসার দ্বিতীয় তলায় আবার বৈঠক বসা হয়। সেখানে গ্রামের লোকেরা অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিমকেও মারধর করেন। এতে মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন মুঠোফোনে ইউএনওকে ঘটনাটি জানানো হয়। পরে দুপুরে পুলিশ এসে মাদরাসা থেকে দুই শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর শিশুটির বাবা বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে আটক দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় তাঁদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারের আগে দুই শিক্ষক রেজাউল করিম ও তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওই ছাত্রীর চাচা মাদরাসা পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন। পরে অ্যাডহক কমিটি হওয়ায় তিনি বাদ পড়েছেন। এ কারণে তিনি শিক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বৈঠক চলাকালে তাঁদের মারপিট করা হয়েছে। তাঁরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল করিম বলেন, তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাবা বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে এসে মাদরাসাশিক্ষকদের যৌন হয়রানির বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছিলেন। এ ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে জরুরি বৈঠক করেন তিনি। তবে তাঁর আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এর আগেও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।
জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, মামলার পর দুই শিক্ষককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সুত্রঃ দৈনিক শিক্ষা.কম