রাজধানী ঢাকায় যেন মেয়েদের জন্য একটি শ্রেণী গোপনে পেতে রাখছে ফাঁদ। কিছুদিন আগে জানা যায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র গোপনে বাসের সিটে পেছনে বসে মেয়েদের জামা-পায়জামা কেটে দিচ্ছে। সম্প্রতি এক তরুণী দাবি করেছেন একটি সংঘবদ্ধ ধর্ষক চক্র রাজধানীতে বন্ধু সেজে মেয়েদের সাহায্য করার নামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জানালেন এমন একটি ঘটনার মুখোমুখিও হয়েছিলেন তিনি।
মাঈশা নামের ওই তরুণী লিখেছেন, আমি লাস্ট স্যাটারডে একটা সাঙ্ঘাতিক বিপদ থেকে বেঁচেছি। এখনো ট্রমা আছে তাও লিখছি কারণ বাকি মেয়েদের জানা উচিৎ।
আমি গতকাল অফিস থেকে ফেরত আসার সময় শ্যামলীতে নামি বাস থেকে। আমার বাসা কল্যাণপুর। সাধারণত আমি এতটুকু পথ হেঁটেই আসি। কিন্তু গতকাল আমার দুপুর থেকে মাইগ্রেন ছিল সাথে প্রচন্ড পায়ে ব্যথা তাই লেগুনা খুঁজতে থাকি। কিন্তু এতটুকু পথ কেউ নিতে রাজি হচ্ছিল না। সোজা পথে ওই রাস্তায় রিকশাও চলে না। রাত তখন বাজে ৮-১৫।
সোশ্যাল মিডিয়াফেসবুকে তিনি বলেন, হঠাৎ পাশে থেকে এক লোক বলে উঠে আপু এখানে এসে দাঁড়ান তাহলে উঠতে পারবেন। হার্মলেস কথাবার্তা। তাও রাত হয়ে গেছে আমি শুধু বললাম- না ভাইয়া থ্যাঙ্কস, আই ক্যান ম্যানেজ ! ওমা! এরপর সে নিজেই আগ বাড়িয়ে রিকশা ঠিক করা শুরু করে দেয়। ততক্ষণে সে শুনে ফেলেছে যে আমি কল্যাণপুর যাবো। সে নাকি পাইকপাড়া যাবে এবং ভাব এমন করল যে আমার সাথেই যাবে। আমি অবস্থা বেগতিক দেখে পা ব্যথা নিয়েই রাস্তা পার হওয়া শুরু করলাম।
তিনি ঘটনার চক্রে বলেন, আগেই বলে নিচ্ছি পায়ের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে সিঁড়ি বেয়ে ওভারব্রিজে ওঠার মতো অবস্থা ছিল না। আর রাতের বেলা ওভারব্রিজগুলোর যেই অবস্থা থাকে তাতে নিচ দিয়ে যাওয়া অনেক সেফ। আমি নিজে ট্র্যাফিক পুলিশের হেল্প নিয়ে অভারব্রিজ থেকে বখাটেদের নামিয়েছি।
যাই হোক, অর্ধেক রাস্তা পার হওয়ার পর দেখি সে রাস্তা পার করানোর নাম নিয়ে আমার হাত ধরে টানছে। রিস্কি হওয়া সত্ত্বেও আমি আমার হাত ছাড়িয়ে নেই।
মাঈশা বলেন, ততক্ষণে আওয়াজে আর টেনশনে মাইগ্রেন বেড়ে গেছে বহুগুণ। ওপারে গিয়ে আবার উৎপাত। সে আমাকে সব অন্ধকার গলি দিয়ে নিয়ে যেতে চায় রিকশায় আমি যতই ভালভাবে মানা করি। সে নাছোড়বান্দা। তাই আমি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ওই কুত্তাকে এক অন্ধকার গলিতে ঢুকাই।
ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করে তরুণী বলেন, তারপর আস্তে করে পিছন থেকে বের হয়ে এসে সোজা হাঁটা শুরু করি, শরীরে যত শক্তি আছে পুরোটুকু দিয়ে। কিন্তু তারপর আমার অসুস্থ শরীর ওই কুত্তার সাথে পারেনি। সে আমার কাছাকাছি চলে আসে। কিন্তু তার আগেই আমি আমার এক বন্ধুকে কল করে বলি লাইনে থাকতে আর ভাব দেখাই আমি খুবই জরুরি আলাপে ব্যস্ত। এভাবে করে আমি কল্যাণপুর পৌঁছাই।
ওই তরুণী বলেন, এরপর এক রিকশাওয়ালাকে ডাবল ভাড়ার কথা বলে বাসার জন্য রিকশা ঠিক করি। আমার বন্ধু তখনও কলে। কিন্তু রিকশা ঘোরানোর সময় আমি ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলি এবং রিকশার একদিকে হেলে পরি মাঝখান থেকে সরে। এই সুযোগে কুত্তা রিকশায় উঠে পড়ে। আমি যে ওইটাকে ধাক্কা দিয়ে ফালাবো, ততক্ষণে ওর সাঙ্গপাঙ্গ ৩ জন চলে এসেছে রিকশার পিছনে। আমি সাথে সাথে আমার এলাকার বন্ধুকে কল দেই এবং ওর সাথে এলাকার যেসব গুণ্ডা টাইপের ছেলেরা আছে তাদের নাম নিয়ে গল্প শুরু করে দেই।
ফেসবুকে সবিস্তারের লিখে বলেন, এর মাঝেই কুত্তা আমাকে ব্যাগ দুই কাঁধ থেকে নামিয়ে সামনে নিতে বলে আর বলে ফোন তার দিকে নিয়ে কথা বলতে। কিন্তু আমি মতলব বুঝতে পারি আর সত্যি বলতে সব মেয়েরই এসব বেপারে ইনস্টিংক্ট খুব ভালো কাজ করে। আমি ওই কুত্তার সব কথা ইগনোর করে কথা চালিয়ে জাই। এরই মাঝে আমি এমন এক ছেলের নাম নেই যে বেশ পরিচিত এলাকায় এবং বেশ কুখ্যাত। ওই ছেলের নাম নেয়ার পরই বডি ল্যাঙ্গুয়েজে এ পরিবর্তন আসে ওই কুত্তার এবং সে লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে যায়। এবং আমি বাসায় আসি সেফলি। না আপু, ওরা ছিনতাইকারী ছিল না, ওরা রেপিস্ট ছিল।
অনেকের প্রশ্ন আসতে পারে মনে করে তিনি বলেন, এখন আপনি বলতে পারেন, আমি কেন শুরুতেই চেঁচামেচি করলাম না। শুরুতে পারিনি কারণ তখনও হার্মলেস কথাবার্তা ছিল আর তখন মানুষই বলতো আমি ওভার রিয়েক্ট করছি।
পরে চেঁচামেচি করতে পারিনি কারণ প্রথমত ততক্ষণে সে এমন একটা পরিস্থিতি বানিয়ে ফেলেছে যে আমি তার পরিচিত। আমি চেঁচামেচি করলে সে হয়তো মানুষকে বুঝিয়ে ফেলতে পারতো যে আমি তার বোন, বাসা থেকে রাগ করে চলে এসেছি তাই এমন করছি। দ্বিতীয়ত, আমি জানি না ওই গ্যাং এ কয়জন ছিল আমি হয়ত একজনের সাথে পারতাম কিন্তু অসুস্থ শরীর নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে পারতাম না।
মাঈশা বলেন, আপনি এখন হয়ত বলবেন প্রথম থেকেই ইগনোর করলে পারতাম কিন্তু সেম কাহিনী আমার সামনে আরেক আপুর সাথে হয়েছে কয়েকদিন আগে। আমি বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাড়িয়ে ছিলাম বাসস্ট্যান্ডে তাই পুরো ঘটনা দেখতে পাই। এক লোক বেশ কিছুক্ষণ ধরে আপুর সাথে হার্মলেস কথাবার্তা বলার ট্রাই করছে কিন্তু আপু পাত্তা দেননি। পুরো ইগনোর করেছেন। হঠাৎ লোকটা আপুর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়।
তরুণী এরকম আরো ঘটনার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, আপু চেঁচামেচি করলে বলে তার ওয়াইফ এখন রাগ করেছে দেখে এমন করছে। আমি গিয়ে তখন ওই আপুকে বাঁচাই। তখন বাকিরা বলা শুরু করে কেনো ওনাদের পারসোনাল ম্যাটারে এ জড়াচ্ছেন। কিন্তু আমি তো দেখেছি এতক্ষন কি হয়েছে তাই বাঁচাতে পেরেছি। কিন্তু যদি না দেখতাম? এটা নতুন এক চক্র যারা ফ্রেন্ডলি মুখোশ পরে ষড়যন্ত্র করে।
আগে মেয়েরা চেঁচামেচি করত পাবলিকের হেল্প পাওয়ার জন্য কিন্তু এখন চেঁচামেচি করলে উল্টো পাবলিকই অপরাধীকে হেল্প করে। এর শেষ কোথায়?
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ