ভোলার লালমোহনে ১৩ পৃষ্ঠার ডায়েরি লিখে বিষপানে গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। চুরির অপবাদ সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করেন। এতে অভিযুক্ত করা হয় শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে।
বুধবার (২ নভেম্বর) বিকেলে ওই গৃহবধূর ডায়েরি পান তার স্বামী লিটন। পাওয়ার পর তিনি শ্বশুরকে খবর দেন। পরে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ওই গৃহবধূর নাম জান্নাতুল ফেরদৌস রত্না (২৫)। তিনি রোববার (৩০ অক্টোবর) রাতে ভোলার লালমোহনের চরভূতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব চৌকিদার বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যা করেন। গৃহবধূ রত্না ওই বাড়ির মো. লিটনের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জননী।
ডায়েরিতে রত্না লিখেছেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যাতে পরপারে ভালো থাকতে পারি। সবার মতো আমিও সুন্দর একটা জীবন নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু এই সমাজ আমাকে বেঁচে থাকতে দিল না। মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না। বাবা-মা স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে কখনো কোনো পরপুরুষের সঙ্গেও কথা বলি নাই, নিজের চরিত্রকে খারাপ করি নাই। কিন্তু আজ আমি চুরি না করেও চোর সবার মুখে মুখে।’
লালমোহন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রত্নার বাবা আবুল কাশেম জানান, ‘তার মেয়ে স্বামীর বাড়িতে সুখেই ছিল। জামাই লিটন তার আপন ভাগনে হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে রত্নার শ্বশুর মো. হাফিজুর রহমান তার কিছুদিন আগে পরিবার নিয়ে ভারত থেকে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসে। ভারতে তিনি বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়ে সন্তোষ দে নামে বসবাস করেন। ওই ঘর থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল ফোন চুরি হয়। এতে করে রত্নার বিরুদ্ধেই চুরির অপবাদ দেন চাচা শ্বশুর হাফিজ উদ্দিন ওরুফে সন্তোষ দে।’
রত্নার বাবা আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, ‘তার মেয়েকে চুরির অপবাদ দিয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত মানসিকভাবে অত্যাচার করে তার চাচা শ্বশুর ও বাড়ির অন্যান্য স্বজনরা। অপমান আর লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে রত্না ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে।’
মৃত্যুর আগে রত্না ওই ডায়েরিতে আরও লিখেন, ‘বাবা আমার অনুরোধ আমার স্বামীকে বাদে বাকি কেউরে ছাড় দিবা না, ওরা সবাই মিথ্যেবাদী। আমার চাচা শ্বশুর ওরা সবাই নাটের গুরু। ওরা সবাই আমার নামে মিথ্যে অপবাদ রটাইছে। আমি কতটা বিশ্বাসী আর সৎ ছিলাম সেটা আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। একটা মানুষের জীবন ছাড়া প্রিয় আর কি হতে পারে! আমি আমার জীবনের বিনিময়ে বলসি আমি চুরি করি নাই। এখন তোরা খুশী, সবাই খুশীই থাক। আমি চলে গেলাম কেউ আর তোদের সঙ্গে সত্যের প্রতিবাদ করবে না। আর বেশি কিছু লিখলাম না। অনেক কথা বলার ছিল সমাজকে, এই সমাজে ভালো মানুষের মূল্য নাই। সবার কাছে একটা অনুরোধ রইল আমার মেয়ে দুজনকে দেখিয়েন। ওদের জন্য আমার কতটা কষ্ট হয় বলে বুঝাতে পারবো না। মা ছাড়া কতটা অবহেলিত সন্তান সেটা যার মা নাই সে বুঝে -বাবা মা পারলে ওদের খেয়াল নিও, না পারলে জোর নাই।’
এভাবেই ডায়েরির ১৩টি পাতায় আরও অনেক কিছু লিখে গেছেন পরপারের বাসিন্দা রত্না। স্বামীর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, দুই মেয়ের উদ্দেশ্যে লিখেছেন। নিজের দাফন কোথায় করবে সেটাও লিখেছেন। ডায়েরিটি রত্নার স্বামী লিটনই ঘর থেকে উদ্ধার করেন। তবে ডায়েরিতে ৮টি পাতা ছেড়া পাওয়া গেছে। স্বামী লিটনও তার স্ত্রীকে যারা অপবাদ দিয়ে মেরেছে সেই চাচাদের বিচার চান।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার চাচারা অনেক গালিগালাজ করেছে। তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।’
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। রত্নার লাশ ময়নাতদন্ত করে আনা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সুত্রঃ চ্যালেন ২৪.কম