কিশোরগঞ্জের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. মির্জা নূর কাউসারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের খড়মপট্টি এলাকা থেকে তাঁকে ‘তুলে নেওয়া’র অভিযোগ করে পরিবার। এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থীকেও গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে সিটিটিসি। গত রোববার নগরীর চন্দ্রিমা থানার চকপাড়ার মেস থেকে তাঁদের তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। অপর ঘটনায়
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা জাকির হোসেন ছয় দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।
সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, জঙ্গি-সংশ্নিষ্টতায় গ্রেপ্তার ডা. কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে। আর রাবির দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রতারণার মামলায়।
সিটিটিসি সূত্র বলছে, ডা. কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজন চিকিৎসকের জঙ্গি-সংশ্নিষ্টতার ব্যাপারে তথ্য মিলেছে। সেসব তথ্য খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নৌশাদ খান জানিয়েছেন, ডা. কাউসার ওই কলেজ থেকেই ২০১৯ সালে পাস করে ফার্মাকোলজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি বাজিতপুরের উজানচর গ্রামের খড়মপট্টি এলাকায় এক আইনজীবীর বাসায় ভাড়া থাকেন। ছাত্রজীবনে তিনি তাবলিগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে কারণে তাঁর জঙ্গি-সংশ্নিষ্টতার বিষয়ে কখনও সন্দেহ করেননি কেউ। তাঁর উজানচর গ্রামের বাড়িটি ‘বিএনপি বাড়ি’ হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত।
গতকাল সোমবার ডা. কাউসারদের বাড়িতে কথা হয় তাঁর চাচাতো ভাই মির্জা খোকনের সঙ্গে। তিনি জানান, কাউসার শৈশব থেকেই বেশ ধার্মিক। এখন যদি কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তার মগজ ধোলাই করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ডা. কাউসারের বাবা আবদুল হেকিম মির্জা সৌদি আরব থাকতেন। সেখান থেকে দেশে ফিরে হাওরে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবসা করতেন। কাউসারের স্ত্রীও একজন চিকিৎসক।
ভাঙ্গায় ছয় দিন ধরে চিকিৎসক নিখোঁজ :ফরিদপুর অফিস ও ভাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা জাকির হোসেন গত ৮ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ৮ নভেম্বর দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের দায়িত্ব পালন শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। সেদিন রাত ১২টা ৩ মিনিটে তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর থেকে স্ত্রীর ফোনে একটি এসএমএস পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়- বিদ্যুৎ নেই, যে কোনো সময় ফোন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর পর ভোর ৫টা ৫৪ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তার ফোনে ডা. জাকিরের ফোন থেকে এসএমএস পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়- শাশুড়ি অসুস্থ, জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় যেতে হবে। আগামীকাল (১০ নভেম্বর) ফিরতে একটু দেরি হবে।
জাকির হোসেন মানিকগঞ্জ শহরের বনগ্রাম আবাসিক এলাকার ৪৫/১, বাড়ির বাসিন্দা সামসুল আলম ও জেসমিন আক্তারের ছেলে। জাকির এক সন্তানের বাবা। তিনি ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সহকারী সার্জন হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। সেই থেকে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা মোহসিন উদ্দিন ফকির বলেন, ৯ নভেম্বর ডা. জাকিরের স্ত্রী আমাকে জানান তাঁর স্বামী রাতে বাসায় ফেরেননি। জাকিরের শাশুড়িও অসুস্থ নন। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ না পেয়ে ভাঙ্গা থানায় জিডি করি।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ওই চিকিৎসকের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। আমরা সব থানায় তার ছবিসংবলিত বার্তা পাঠিয়েছি। পাশাপাশি ডিবি ও র্যাব কাজ করছে।
প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার রাবির দুই ছাত্র :রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার চকপাড়া এলাকার মেস থেকে রাবির দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- রেজোয়ান ইসলাম রিজু ও শাকিব শুভ। দু’জনই চিত্রকলা, ছাপচিত্র ও প্রাচ্যকলা বিভাগর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। এর আগে রোববার সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাঁদের তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। রেজোয়ানের গ্রামের বাড়ি যশোরের মনিরামপুর এবং শাকিবের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলায়।
রেজোয়ানের বড় ভাই মিরাজুল ইসলাম বলেন, রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘুম ভাঙার পর দেখি সাদা পোশাকে চার-পাঁচজন লোক রিজু ও শাকিবকে জেরা করছে। সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আটক হওয়া আরও দুই তরুণ ছিলেন। কিছুক্ষণ জেরা করার পর রিজু ও শাকিবকে তাঁরা গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। পরিচয়পত্র দেখতে চাইলেও তাঁরা দেখাননি। এ ঘটনায় চন্দ্রিমা ও মতিহার থানায় গেলে তাঁরা জিডি নিতে রাজি হননি।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, প্রতারণার একটি মামলায় ওই দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুত্রঃ সমকাল