চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় হেফজখানায় পড়ুয়া এক মাদ্রাসাছাত্রকে নির্মমভাবে বেত দিয়ে পিটিয়েছেন শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মাইজপাড়া ছদাহা আয়েশা ট্রাস্ট মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থীর নাম হাবিবুর রহমান বাবলু (১০)। সে ওই এলাকার প্রবাসী আবদুর রশিদের ছেলে। মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আহমদ শফি তাকে বেধড়ক মারধর করেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে বাবলুকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত বাবলুর মা থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বাবলুর মা হাছিনা আক্তার বলেন, ‘গত এক মাস ২৮ দিন আগে আমার ছেলেকে আয়েশা ট্রাস্টে হেফজ করার জন্য দিয়েছিলাম। এর আগে ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। হুজুর আহমদ শফি ঘটনার কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার গেট দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। তখন আমি বলি, ছেলের বাবা বিদেশ থাকে। সম্প্রতি আমার একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলের হেফজ শেষ হলে সামর্থ্যে যা পারি তা মাদ্রাসাকে সহায়তা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটি আমার পাড়ার মধ্যে অবস্থিত। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ছেলে ছুটিতে বাড়ি আসে। গত বৃহস্পতিবার বাড়ি না আসায় হুজুরকে ফোন দিলে তিনি আমাকে বলেন, ছেলের পড়া শেষ করতে পারেনি। তাই এ সপ্তাহে সে বাড়ি যাবে না। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে মাদ্রাসার দেওয়াল টপকে পালিয়ে বাড়ি আসলে দেখি তাকে সারা শরীরে বেত দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে। মূলত হুজুরের দাবিকৃত দুই লাখ টাকা না দেওয়ায় ছেলেকে পিটিয়েছে হুজুর।’
সাতকানিয়া হাসপাতালে চিকিৎসারত ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছেন। এ ঘটনায় থানায় হুজুরের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে মামলা করবেন বলে জানান হাছিনা আক্তার।
মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক ও ছদাহা আয়েশা ট্রাস্ট মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আহমদ শফি বলেন, ‘ছেলেটি পড়ালেখায় অমনোযোগী ও ফাঁকি দিচ্ছে। তাই শাসন একটু বেশি হয়েছে। এ ব্যাপারে কয়েকজন ইউপি সদস্যসহ মাদ্রাসার অফিসে বসে বিষয়টি সমাধান করেছি এবং ছেলেটির মায়ের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছি। তবুও পাড়ার লোকজন এসে আমাকে মারধর করেছে।’
টাকা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সব ছাত্রদের ফ্রি খাওয়ানো ও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. এ পি বণিক বলেন, ‘ছেলেটির অবস্থা তেমন ভালো না। যে কোনো সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে, দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ছেলেটিকে।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, ‘শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রকে পেটানোর ঘটনাটি খুবই নির্মম। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় ছাত্রটির অভিভাবক মামলা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুত্রঃ চট্টগ্রাম প্রতিদিন