আলীনা ইসলাম আয়াত
কয়েক মাস আগে আলীনা ইসলাম আয়াতের জন্য সাদা নতুন জামা কিনেছিলেন বাবা। সেই জামা জন্মদিনে পরবে বলে তুলে রেখেছিল যতনে। আয়াতের জন্মদিন এসেছে। জামাও আছে। কিন্তু জামাটি পরে আনন্দ করার সেই আদরের শিশুটি নেই। মা-বাবা এখন জামাটা নিয়ে শোকের সাগরে ভাসছেন।
গত ১৫ নভেম্বর প্রতিবেশী তরুণ আবীর আলীর হাতে খুন হয় আয়াত। হত্যার পর তার দেহ ছয় টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সাগর ও খালে। আজ বুধবার আয়াতের জন্মদিন। শিশুকে হারানোর দগদগে ঘা এখনও শুকোয়নি। এর মধ্যেই এই জন্মদিন শোক বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। দিনভর নগরের বন্দরটিলার নয়ারহাট ওয়াজ মুন্সীর নতুন বাড়িটি থমকে ছিল বেদনায়।
২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্ম হয় আয়াতের। জানতে চাইতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সাহেদা আক্তার তামান্না। একটু সুস্থির হতেই জানালেন, একটু বড় হওয়ার পর থেকেই জন্মদিন ঘিরে থাকত নানা আবদার। কিছু দিন আগেও তার প্রবাসী নানাকে কেকের টাকা পাঠাতে বলেছিল। চকলেট ও খেলনা পাঠাতে বলেছিল। জন্মদিনে পরে কেক কাটবেন বলে বাবার দেওয়া নতুন জামাটিও তুলে রেখেছিল। এসব বলেই আর্তনাদ করে মা তামান্না বলেন, ‘ও আল্লাহ আমি কারে নিয়ে জীবন কাটাব এখন। এমন দিনে আমার সোনার টুকরো আমার কাছে নেই।’
আয়াতের বাবা সোহেল রানা জানান, তাঁরা দুই ভাই এক বোন। ছোট ভাই বিয়ে করেনি। বোনের কোনো সন্তান নেই। তাই আয়াত ছিল পরিবারের সবার আদরের। এবার জন্মদিনে বেড়ানোর আবদার করেছিল সে। বলেছিল, প্রথমে নানার বাড়ি যাবে, সেখান থেকে যাবে ফুফুর বাড়ি।
তিনি বলেন, ‘আবীর আমার কলিজার টুকরো মেয়েকে মেরে ফেলবে কখনও কল্পনাও করিনি। সে কীভাবে আমার মেয়েকে ছয় টুকরো করল! তার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না। আমি তার ফাঁসি চাই।’
আয়াতের যত আবদার ছিল দাদার কাছে। গৃহিণী মা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। মুদি দোকান করতেন বাবা। দাদাই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। আদরের নাতনিকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান দাদা মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, একদিনও ঘুমাতে পারিনি। চোখ বুঝলেই আয়াতের চেহারাটা ভেসে ওঠে। একটা ছেলে (আবীর) এত পাষণ্ড হলো কী করে! তার ফাঁসি চাই। তিনি জানান, আয়াতের জন্মদিনে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বাড়িতে দোয়া হয়েছে। কিছু দরিদ্র মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে।
গত ১৫ নভেম্বর নগরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট এলাকার ওয়াজ মুন্সীর নতুন বাড়ির বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয় আয়াত। ২৫ নভেম্বর তাদের ভাড়াটিয়া আজহারুল ইসলামের ১৯ বছর বয়সী ছেলে আবীরকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ে আয়াতকে ছয় টুকরো করার কথা স্বীকার করে সে। ৩০ নভেম্বর খাল থেকে শিশু আয়াতের দুই পা ও ১ ডিসেম্বর খণ্ডিত মাথা উদ্ধার হয়। গ্রেপ্তার করা হয় আবীরের বাবা, মা, বোন ও এক বন্ধুকে।
সুত্রঃ দৈনিক সমকাল