লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ১০ বছরের এক ছাত্রকে তিন মাস ধরে বলাৎকার করার অভিযোগ উঠেছে তিন মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) পরিচালনা কমিটির সামনেই অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে জুতাপেটা করা হয়। তবে এরপরই কৌশলে মাদ্রাসা থেকে তাদের বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ওই ছাত্রকে রায়পুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত তিন মাস ধরে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন ও চরআবাবিল ইউনিয়নের মাঝখানে মিতালি বাজার আল মাদানি মডেল মাদ্রাসার আবাসিক কক্ষে এ বলাৎকারের ঘটনা ঘটলেও। বিষয়টি জানাজানি হয় রোববার (২৫ ডিসেম্বর)। ভুক্তভোগী শিশুর মা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন- কিশোরগঞ্জের মাওলানা মো. রাহাত হোসেন, সিলেট সুনামগঞ্জের মাওলানা আবু হুরায়রা ও ভোলা সদরের মাওলানা আমিরুন ইসলাম।
ভুক্তভোগীর শিশুর মা বলেন, তিন বছর আগে আল মাদানি মডেল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে ভর্তি করাই ছেলেকে। মাদ্রাসার আবাসিক ভবনেই অন্য শিশুদের সঙ্গে সে থাকত। গত এক সপ্তাহ আগে শিশুটি ছুটিতে বাড়িতে আসলে আর মাদ্রাসায় যেতে চায় না। অনেক চাপ সৃষ্টির পর সে জানায়, তিন শিক্ষক তাকে অনেক দিন ধরে বলাৎকার করে আসছেন। সে রাতে ঘুমাতে পারে না, তার খুব কষ্ট হয়। তাকে মারধরও করা হয়। আবাসিকের সব ছাত্র যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন ওই তিন শিক্ষক তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতেন।
তিনি আরও জানান, একপর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একদিন টয়লেটে প্রায় ২ ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে বসেছিল ছেলে। এ ঘটনায় চরমোহনা গ্রামের বাসিন্দা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মুফতি ইসমাইল হোসেনকে জানালে তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের জানান। মঙ্গলবার পরিচালনা কমিটির সামনেই প্রিন্সিপাল অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে জুতাপেটা করে তাদের আইনের আওতায় না এনে কৌশলে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে কয়েকদিন আগে প্রিন্সিপাল বাড়িতে এসে শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
শিশুর মা আরও জানান, গত রোববার রাতে শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে সোমবার রায়পুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এ সময় ডাক্তার নজরুল ইসলাম শিশুকে পরীক্ষা করে উন্নত চিকিৎসায় সদর হাসপাতালে পাঠান। মঙ্গলবার সকালে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ২০১৯ সালে ২১ হাজার টাকা করে ৭টি কক্ষ ভাড়া নিয়েছি। ছয় শিক্ষক এবং আবাসিক-অনাবাসিকসহ মোট ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চাকরিতে যোগদানের সময় নিয়ম অনুযায়ী ওই তিন শিক্ষক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা কৌশলে মাদ্রাসার দাফতরিক কাগজপত্র রাখার ড্রয়ের থেকে নিজেদের কাগজ সরিয়ে নেন। তাদের ঠিকানা সম্পর্কে তেমন তথ্য মাদ্রাসার কাছে নেই। তাদের বর্তমান অবস্থানও তিনি জানেন না। ডিসেম্বর মাসে ১৫ দিনের জন্য শিক্ষক ও ছাত্রদের ছুটি দেয়া হয়।
এ ঘটনায় রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে মাদ্রাসায় পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন। ব্যবস্থা নিতে ওসিকেও নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া জানান, যেহেতু ঘটনাটি আগের তাই আমরা বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেব। মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।
সুত্রঃ সময় টিভি