সিলেট নগরীর একটি ফ্ল্যাটের এক কক্ষে ঝুলছিল সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ফারাজানা হক মিলির (২৫) লাশ। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী নূর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) বেলা ২টায় সিলেট নগরের তেলিহাওরের সিলভ্যালী টাওয়ারের তৃতীয় তলার এ-২ ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পুলিশের ধারণা ভোরের দিকে মিলির মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ফারজানা হক মিলি ওই বাসার বাসিন্দা নূর আলমের স্ত্রী ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। মিলি জেলা পর্যায়ের সাবেক নারী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়।
মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজবাহার আলী শেখ বলেন, লাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শনিবার ভোররাতের দিকে মিলির মৃত্যু হয়েছে এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।
মিলি আত্মহত্যা করেছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিলিংফ্যানের সাথে ঝুলানো লাশের হাঁটু বিছানায় লাগানো ছিল। তাতে যথেষ্ঠ সন্দেহের উদ্রেক রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের সহকারী কমিশনার শামসুদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় কোতোয়ালি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাওন মাহমুদ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর লাশ ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কোতোয়ালি পুলিশের সহকারী কমিশনার শামসুদ্দিন বলেন, মিলি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কিনা, তাও জানার চেষ্টা চলছে।
পরিবারের লোকজনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে মিলির সাথে ঝগড়া করেন স্বামী। ঝগড়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে বাসার একটি কক্ষে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন মিলি। এ দু`দিন তিনি না খেয়ে থাকলেও স্বামীসহ বাসার লোকজন তার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।
নিহতের ভাই সাংবাদিক এনামুল হক রেনু ও আমিনুল হক সিপনের অভিযোগ, মিলিকে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে।
তারা বলেন, মিলির স্বামী নূর আলম তার স্ত্রীর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ছয় লাখ টাকা তুলে অনলাইনে জুয়া খেলেছেন। সেই সাথে মিলির ব্যবহৃত স্বর্ণ দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে জুয়া খেলেছেন। এসব বিষয় নিয়ে তাদের বোনের সাথে কথা কাটাকাটির জের থেকে মারধর করা হয়। এরই জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে দাবি করেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে নিহতের স্বামী নূর আলম বলেন, আমাদের প্রায়ই ঝগড়া হতো। সে খুব রাগী ছিল। কখনো রাগ করে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে দুই থেকে তিনদিন ঘুমিয়ে থাকত। বৃহস্পতিবার রাতেও ঠিক একইভাবে রাগ করে দরজা বন্ধ করে থাকে মিলি।
জুয়া নয় পেশা হিসেবে অনলাইনে ডলার কেনা-বেচা করতেন জানিয়ে তিনি বলেন, স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। বাড়ির জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছি। মিলির ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠাইনি।
প্রায় দুই বছর আগে জগন্নাথপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম সিরাজুল হকের মেয়ে ফারজানা মিলির সাথে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলিয়ার কাপন গ্রামের আসকর আলীর ছেলে নূর আলমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সিলেট নগরের তেলিহারস্থ সিলভ্যালী টাওয়ারের ডা. মোছা. মরিয়ম সিদ্দিকীর মালিকানা ফ্লাটে ভাড়া থাকতেন এ দম্পতি।
সুত্রঃ ইউএনবি