ধর্মীয় অপব্যাখ্যার কারণে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ-তরুণী, কিশোর কিশোরীরা কথিত হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। অনেককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার কিংবা ফিরিয়ে এনে এসে ডিরেডিকালাইজড করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। যদিও এখনও অনেকের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বলছেন, কথিত হিজরতের উদ্দেশে এখনও বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে অনেকে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, যারা বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে সেই পরিবার যদি থানায় অবগত না করে তাহলে এসব বিষয় জানা দুরূহ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অভিভাবকরা সচেতন হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, সন্তান কিংবা পরিবারের সদস্য হঠাৎ নিখোঁজ হলে অনেকেই এখন থানায় সাধারণ ডায়েরি করছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবারের কোনও সদস্য, তরুণ-তরুণী কিংবা কিশোর-কিশোরীর নিখোঁজের তথ্য পেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অবস্থান এবং কোনও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা—এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। কারও দ্বারা মোটিভেটেড হয়েছে কিনা এসব বিষয় জানার চেষ্টা করা হয়। ঘর ছেড়ে যাবার আগে তাদের আচরণগত কোনও পরিবর্তন এসেছিল কিনা এসব বিষয় পরিবারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্য বা সন্তানকে ফিরে পাবার জন্য অভিভাবকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তাও করে।
এখন পর্যন্ত কথিত হিজরতকারীর সংখ্যা কত বা কারা হিজরতে বেশি গিয়েছে, কী কারণে গিয়েছে—এসব বিষয়ে জানাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, হিজরতকারীদের সংখ্যা কত, তারা কোথায় গিয়েছে বা জঙ্গি সম্পৃক্ততার কোনও ঘটনা ছিল কিনা তা নিখোঁজদের উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার আগ পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়। অনেক তরুণ-তরুণী, কিশোর কিশোরীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমান করেও বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তাই কেউ নিখোঁজ হলে আমরা সব ধরনের পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় আনি। থানায় অভিযোগ এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বোঝা সম্ভব হয় তারা আসলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল কিনা। তাই জঙ্গি সম্পৃক্ততায় হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া যেকোনও বয়সী তরুণ-তরুণী, কিশোর কিশোরীরা হিজরতের উদ্দেশে গিয়েছে কিনা এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
সম্প্রতি কথিত হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া ৫৫ তরুণের তালিকা দেয় র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন র্যাব। বাহিনীটির কর্মকর্তারা বলেন, এসব তরুণদের দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে এখন রাঙামাটি, বান্দরবানের পাহাড়ে নিয়ে রাখা হয়েছে। তারা সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পদের সদস্যরা এখন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। নব্য জেএমবিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এবং প্রশিক্ষিত সদস্যরা নতুন এই জঙ্গি সংগঠনে থাকায় তারা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রশিক্ষিত। যাদের নতুন রিক্রুট করা হয় তাদের বয়স অনেকটাই কম, বিশেষত কিশোর-কিশোরী কিংবা তরুণ-তরুণী। তাদের দলে ভিড়িয়ে সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনায় রয়েছে সংগঠনটি।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ভার্চুয়ালি সক্রিয়। অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজ করে থাকে, জঙ্গিবাদে আগ্রহী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট) মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও কথিত হিজরত চলমান আছে। যা শঙ্কার বিষয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি বন্ধ করার জন্য কিংবা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সম্প্রতি ৫৫ জনের একটি তালিকা দিয়েছি যারা হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে এখন পাহাড়ে অবস্থান করছে। পাহাড়ে গত কয়েক মাস ধরে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কথিত হিজরতকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের ধরা হবে। এছাড়া হিজরতকারীদের পেছনে যারা আছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন