‘আমার সব শেষ, আমার মা শেষ, লাইফ শেষ, স্বপ্ন শেষ। অনেক কষ্টে মেয়েটাকে বড় করছি, লেখাপড়া করাইছি। তারে এইভাবে মেরে ফেলল! ঐ বাস কই? আমি কাউকে ছাড়ব না’— এভাবেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে মেয়ে নাদিয়ার লাশ ছুঁয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। পাশেই নাদিয়ার মা পারভীন আক্তার ছিলেন চেতনাহারা।
আদরের মেয়ে নাদিয়া। উনিশে পা রেখেছে কেবল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হলেও এতদূরে পাঠাতে মন সায় দেয়নি বাবা জাহাঙ্গীর হোসেনের। শেষমেশ মেয়েকে ভর্তি করান রাজধানীর নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিতে। তবে মেয়েকে কাছে রাখার বাবার ইচ্ছাটা চিরতরে নিভিয়ে দিল ঢাকার রাস্তার বেপরোয়া বাস।
গতকাল রোববার দুপুরে নদ্দা এলাকায় ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় মুহূর্তে নিথর প্রাণচঞ্চল মেয়েটি। নাদিয়া এক বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ‘গতিদানব’ বাসটি তাঁদের পেছন থেকে ধাক্কা দিলে মর্মন্তুদ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
স্বজন, সহপাঠী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদরে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন নাদিয়া। বাবা স্থানীয় এক পোশাক কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক। নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এই মাসে তিনি উত্তরা-৯ নম্বর সেক্টরে মেয়েদের একটি মেসে ওঠেন। গতকাল সকালে এক শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে বইয়ের তালিকা নিতে বন্ধু মেহেদি হাসানের সঙ্গে বের হন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে তারা মোটরসাইকেলে নদ্দা এলাকার প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের বেপরোয়া বাসটি পেছন থেকে তাদের ধাক্কা দেয়। এ সময় নাদিয়া রাস্তায় ছিটকে পড়লে তার মাথা থেঁতলে চলে যায় বাস। পরে পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক মেহেদির তেমন আঘাত লাগেনি। তাকে থানায় নিয়ে ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মেহেদি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়েন।
জাহাঙ্গীর জানান, সকালে ফোনে মেয়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে বড় ছিলেন নাদিয়া। ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। ছোট দুই মেয়ে পড়ে স্কুলে।
ভাটারা থানার ওসি এবিএম আসাদুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে নাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত চালক-হেলপারকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিকেলে বিমানবন্দর সড়কের কাওলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তার সহপাঠীরা। আজ সোমবারের মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। এছাড়াও তারা নাদিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, ভিক্টর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল এবং কাওলা এলাকায় বাস স্টপেজের দাবি জানান। অবরোধের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা ঐ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। আশপাশের সড়কগুলোতেও তীব্র হয়ে ওঠে যানজট। পরে পুলিশের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
সুত্রঃ ডেইলী বাংলাদেশ