২০১৯ সালে স্কুলে পড়ার সময় আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিজয় রহমানের। বিজয়ও একই স্কুলে পড়তেন। এই সম্পর্ক চলাকালীন গত বছরের জানুয়ারিতে জেসিকা মাহমুদ জেসি নামে এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে প্রেম শুরু করেন বিজয়। এরপর দুজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন তিনি। কিন্তু একপর্যায়ে আদিবাকে গোপনে বিয়ে করেন বিজয়।
সবশেষ এই বিয়ের খবর জানতে পারেন জেসি। এক সময় বিজয়ের সঙ্গে তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা আদিবাকে জানান জেসি, যা নিয়ে পরে বিজয়-আদিবার মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। এ অবস্থায় তারা দুজন মিলে জেসিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। র্যাব জানায়, মুন্সিগঞ্জে জেসিকে বাসার ছাদে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন দুজন। তারা হলেন আদিবা আক্তার ও বিজয় রহমান। র্যাব জানান, এই দুজন স্বামী-স্ত্রী। স্ত্রীকে নিয়েই জেসিকে হত্যা করেন বিজয়।
এর মধ্যে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেফতার করা হয় বিজয়কে। এর আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন আদিবা।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
নিহত জেসিকা মাহমুদ জেসি মুন্সিগঞ্জ সদর থানার কোর্টগাঁও এলাকায় থাকতেন। ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান বিজয়। এই সম্পর্ক চলাকালীন গত বছরের জানুয়ারিতে জেসির সঙ্গে প্রেম শুরু করেন বিজয়। এরপর দুজনের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন তিনি। এ অবস্থায় আদিবাকে গোপনে বিয়ে করেন বিজয়।
বিষয়টি জানতে পেরে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবাকে মেসেঞ্জারে পাঠান জেসি। এরপরই সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় বিজয়-আদিবার।
র্যাব জানায়, একপর্যায়ে তারা দুজন জেসিকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এজন্য গত ১ জানুয়ারি বিকেলে জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে নেন আদিবা। সেখানে গেলে জেসির সঙ্গে তাদের দুজনের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দুজনে মিলে জেসিকার গলাটিপে ধরেন। এতে শ্বাসরোধে অজ্ঞান হয়ে পড়েন জেসি।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পর নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন বিজয়-আদিবা। তারা জেসিকে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজান। এজন্য তাকে ধরে ভবনের নিচে নামিয়ে আনেন বিজয়-আদিবা। পরে অজ্ঞান অবস্থায় জেসিকে রাস্তার পাশে ফেলে বাসায় চলে যান তারা।
পরে পাশের বাসায় থাকা বিজয়ের চাচা জেসিকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। এসময় বিজয় এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসেন। একপর্যায়ে বিজয় এবং তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেসিকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জেসিকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর ঘটনা শুনে বিজয় ও আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
খন্দকার মঈন বলেন, এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখানে বন্ধুর বাড়িতে চারদিন আত্মগোপনে থাকেন বিজয়। এরপর সেখান থেকে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকেন। একপর্যায়ে গ্রেফতার এড়াতে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারীতে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় চলে আসেন বিজয়। সবশেষ সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় র্যাব।
সুত্রঃ জাগো নিউজ.২৪.কম