নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেওয়া অনেকের বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। এদের মধ্যে ১৪ জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আরো ২৫ জনের তালিকা নিয়ে যাচাই-বাছাই করছে র্যাব-৮। র্যাবের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এসব জঙ্গিদের বাড়ি। এর মধ্যে বরিশাল জেলার তিন জন, পটুয়াখালীর ছয় জন, বরগুনার এক জন, ঝালকাঠির এক জন এবং ফরিদপুর জেলার দুই জন ও মাদারীপুরের এক জন রয়েছে।
গতকাল রবিবার বিকালে ইত্তেফাককে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-আট অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, শনাক্ত হওয়া জঙ্গিদের একটি বড় অংশের বাড়ি বরিশাল বিভাগে হলেও এই অঞ্চলে জঙ্গি হামলার বা পরিকল্পনার কোনো গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে নাই। তবে আমরা এ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সারিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওফে রনবীরকে গ্রেফতারের পরে তার মোবাইলে অস্ত্রের প্রশিক্ষণের কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩২ জনের নাম-পরিচয় পায় র্যাব। এই ৩২ জনের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। আরো যে ২৫ জনের তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পরিচয় পাওয়া ১৪ জন হলেন—বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ এলাকার বাসিন্দা রাক্কী আব্দুস সালাম ওরফে দুমচুক ওরফে রাসেল (২৮), সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামের মো. আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেন (২৬), বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশীবপুরের ভবানীপুর গ্রামের মো. মাহমুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০), পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামের আল আমিন ফকির ওরফে মোস্তাক (১৯), মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ (২৬), পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার মধ্য গছানিয়া গ্রামের শামীম মিয়া ওরফে আবু হুরায়রা ওরফে রাফি ওরফে চামদুর (২৫), একই থানার উত্তর লক্ষ্মীপুর দফিপুর গ্রামের হোসাইন আহমদ ওরফে রেকমি ওরফে প্যাদা (২১), মহিপুর থানাধীন মহিপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ সাকিব ওরফে শান্ত (২০), মির্জাগঞ্জ থানাধীন সুবিধখালী গ্রামের জুয়েল মাহমুদ (২৭), বরগুনা সদর উপজেলার বুরা মজুমদার এলাকার সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), ঝালকাঠি জেলা সদর থানার বাউকাঠি কালিকান্দা এলাকার হাবিবুর রহমান ওরফে মুরা (২৩), ফরিদপুর বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মো. আবু জাফর পিন্টু ওরফে তাহান (৪৩), একই জেলার মহনপুর গ্রামের মো. জাকারিয়া ওরফে ফিরুক (২৬) ও মাদারীপুর জেলার কালিকাপুর পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মো. ইয়াছিন ওরফে আরফি (২১)।
র্যাব সূত্র জানায়, এরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল এবং এদেরকে সেসব অঞ্চল থেকেই সংগ্রহ করেছে এ সংগঠনটি। এদের অনেকেই আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের পাওয়া তথ্য বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে জঙ্গি সংগঠনের খোঁজ পায় অভিযুক্তরা। এদের মধ্যে কেউ লেখাপড়া করতেন আবার কেউ-বা ছোটখাটো চাকরি বা ব্যবসা করতেন। এরা কেউ সংঘবদ্ধ ভাবে যায়নি। প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা গিয়েছিলেন।
এ ক্ষেত্রে করণীয় কী এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব অধিনায়ক বলেন, আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা যেসব জঙ্গি ধরা পড়েছে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে আমরা বুঝিয়েছি, যাদের সন্তান নিখোঁজ আছে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সহযোগিতা করব।
এ বিষয়ে নিখোঁজ বরিশালের মো. মাহামুদ ডাকুয়া ওরফে হাকার (২০) ভাই রাসেল ডাকুয়া জানান, নিউ মার্কেটে তাদের দোকান রাসেল বুক ডিপোতে মাহামুদ প্রচ্ছদ ও কম্পোজের কাজ করত। এছাড়া একটি কলেজে ডিগ্রিতে পড়ত। সে যে এ ধরনের কাজে যুক্ত হয়েছে তা আমরা জানতে পারিনি। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ থেকে সে নিখোঁজ। এর পর থেকে ভাইয়ের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
সুত্রঃ ইত্তেফাক