ইংরেজি সাইবার বুলিং-শব্দটি এখন বাংলাদেশেও বেশ পরিচিত। সাধারণত প্রযুক্তি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে কারো ক্ষতি করার মতো অপরাধই সাইবার বুলিং। যার বেশিরভাগ ভিকটিম হচ্ছেন নারীরা। এমনই ঘটনার শিকার হয়েছেন আইটি ব্যবসার সাথে জড়িত এক চিকিৎসক। তার অভিযোগ ব্যবসায়ীক পার্টনার সাইফুল ব্যবসায়ীক এক মিটিং-এ আমের জুসের সঙ্গে চেতনা নাশক ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে তাকে ধর্ষণ করে এবং সেই ধর্ষণের ভিডিও এবং ছবি অনলাইনে প্রচারের ভয় দেখিয়ে আরেকবার ধর্ষণ করে। দ্বিতীয় ধর্ষনে গর্ভবতীও হয়ে পরেন সেই তরুনী। পরে অভিযুক্ত সজিব সাইফুল একই রকম ভয় দেখিয়ে স্বচ্ছল ঐ তরুনীর পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন ঐ চিকিৎসক তরুনী ।
আরেক তরুণী ২৮ বছরের তিলোত্তমা । ভালোবাসে ধর্ম পরিবর্তন করে শাওন শহীদের ঘরে উঠেছিলেন । বিয়ে না করেই একসাথে ছিলেন প্রায় তিন বছর। তরুণীর অভিযোগ, একান্ত মুহুর্তের নানা ছবি-ভিডিও অভিযুক্ত শাওন নিজের মোবাইলে তুলে তা ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পিতা-মাতা হারা ঐ তরুনী নিধারুন কষ্টে পার করছেন তার সময়।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, সাইবার বিষয়ক ভুক্তভোগীদের ৩.২৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ১.৯৫ শতাংশ, ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয় ১৫.৫৮ শতাংশকে । সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয়েছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা।
এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানা অপরাধের ঘটনা ও অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। নারীরাই বেশি শিকার হচ্ছেন সাইবার বুলিং-এর। স্পর্শকাতর ঘটনা বা ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিই অপরাধীদের প্রধান হাতিয়ার। বিশেষ আইন, ট্রাইব্যুনাল ও পুলিশের বিশেষ ইউনিট গঠনের পরও এ ধরনের অপরাধ কমছে না।
ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ সামাল দিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে চালু করাহয় পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশেষ এই পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ৩১ হাজার দু’শো ৮৪ জন নারী। তাদের মধ্যে ২৪ হাজার দু’শো ২৭ জনই সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, অন্তরঙ্গ ছবি/ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া ও ভুয়া আইডি থেকে সাইবার বুলিং এ শিকার হন পুরুষরাও, তবে নারী ভুক্তভোগীর সংখ্যা পুরুষের প্রায় চারগুণ।
এই অপরাধের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিতে গঠন হয়েছে বিশেষ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এসংক্রান্ত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে(সংশোধিত) সাইবার বুলিংয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে ।
২০২১ সালের এপ্রিলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সংক্রান্ত অপরাধের দ্রুত বিচারের জন্য সব বিভাগে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে সরকার। তার আগে শুধুমাত্র ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল ছিল।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬’ -এ দেয়া ক্ষমতাবলে এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের জন্য এই সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম শামীম বললেন, মেয়েদের সরলতার সুযোগ নিয়ে নিয়ে ধর্ষণ ছাড়াও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অনেক প্রতারক। সম্মানহানীর ভয়ে ভিকটিমের স্বজনরা তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলছেন, দেশে প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হলেও আইন বা সমাজ এসব অপরাধ দমনে ততোটা জোরালো অবস্থান নেয়নি। সাইবার বুলিং কমাতে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি যুব সমাজকে ইতিবাচক বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত করার পরামর্শও দেন এই বিশেষজ্ঞ।
সুত্রঃ বাংলাভিশন নিউজ