ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে তার ভিডিও ধারণের ঘটনায় ইবি কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। সে সঙ্গে হলের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ফুলপরী খাতুনকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। আদালতের নির্দেশে প্রতিবেদনগুলো পড়ে শোনান।
তিনিই প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হলের প্রভোস্ট, হাউজ টিউটরদের দায়িত্বে চরম অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ হয়েছেন।’
রিটের পক্ষে শুনানি করা অ্যাডভোকেট গাজী মো. মোহসীন বলেন, ‘হলের প্রভোস্টের সামনে এই ঘটনার পরও চুপ ছিলেন। বরং তিনি অভিযুক্তদেরকেই সহযোগিতা করেছেন। তিনি ভিকটিমকে কোনো সহযোগিতা করেননি। জুডিশিয়ারি রিপোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উদাসীনতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আদালত তদন্ত রিপোর্ট দেখে আগামীকাল (বুধবার) আদেশ দেবেন।’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭-৮ জন ফুলপরীকে গণরুমে ডেকে নেন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালাগাল করা হয়। পরে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন অভিযুক্তরা। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।
লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর হল ছেড়ে পাবনায় নিজ বাড়িতে চলে যান ফুলপরী খাতুন। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আইনজীবী আজগর হোসেন তুহিন।
তখন আদালত আইনজীবীদের লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ছাত্রীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নির্দেশে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
সুত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ