রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ জঙ্গি হাতকাটা মাহফুজ ও শরিফুলের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা রয়েছে রাজশাহীর আদালতে। কিন্তু ওই মামলার বিচারকাজ থমকে আছে বারবার সমন জারির পরও সাক্ষীরা আদালতে না আসায়। এ কারণে দফায় দফায় পেছাচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ।
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নিউ জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গি সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ এবং শরিফুল ওরফে তালহা সাত বছর আগে রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। রাজশাহীর তানোর এলাকায় জঙ্গিবিরোধী থান্ডারবোল্ড অপারেশন মামলার আসামি। মামলাটি এখন রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শরিফুল ওরফে তালহা ও সোহেল মাহফুজকে রাজশাহীতে আনতে হয়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে মামলার নির্ধারিত তারিখে তাকে আদালতে তোলা হয়। তবে পর পর তিনটি নির্ধারিত তারিখে সাক্ষ্য দিতে আসেননি সাক্ষীরা। ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর সোহেল মাহফুজকে রাজশাহী আনার বিষয়টি সবাইকেই ভাবায়। নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাও। কিন্তু সাক্ষীরা না আসার কারণে সবই পণ্ডশ্রম হয়ে যায়। সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় মামলার বিচারকাজও বিলম্বিত হচ্ছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কাশিমপুর থেকে আনার পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সোহেল মাহফুজকে রাখা হয়েছিল আদালতে তোলার জন্য। ওই মামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য আগেই সমন পাঠানো হলেও সাক্ষ্য দিতে তারা আসেননি। তবে আদালত আগামী ২৫ এপ্রিল মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
এর আগে ৭ মার্চ ছিল মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে কাশিমপুর হাউসিকিউরিটি কারাগার থেকে জঙ্গি শরিফুলকে রাজশাহীতে পাঠাতে রাজি হননি সেখানকার সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা। তবে আগে থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকায় জঙ্গি হাতকাটা মাহফুজকে আদালতে তোলা হয়। এর আগে র্যাব ও পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয় আদালত প্রাঙ্গণে। এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসামি জঙ্গি শরিফুলকে আদালতে হাজির না হওয়ায় ওইদিনও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় মোট ২৫ জন সাক্ষী আছেন। এর মধ্যে আটজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অভিযোগ গঠনের পর গত বছরের ১৭ এপ্রিল প্রথম সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী পুলিশের পিএসআই জাহেদুল ইসলাম খন্দকার। এরপর ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট চারজন এবং চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি তিনজন সাক্ষ্য দেন। ২৪ জানুয়ারির পর তিনটি নির্ধারিত দিন পার হলেও কেউ সাক্ষ্য দিতে আসেননি। ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মামলাটির ধার্য তারিখ পেরিয়েছে ২১টি। তবে এ পর্যন্ত যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ঘটনা সম্পর্কে সরাসরি জানেন না বা দেখেননি বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
পুলিশের দুর্বল চার্জশিট ও সঠিক সাক্ষী নির্ধারণ না করতে পারায় অনেক ক্ষেত্রেই স্পর্শকাতর মামলার আসামিরাও ছাড় পেয়ে যেতে পারে, মনে করছেন আইনজীবীরা। রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘সাক্ষীরা নির্ধারিত দিনে সাক্ষ্য দিতে না এলে বিচারকাজ বিলম্বিত হয়। আদালত সমন জারি করার পর সাক্ষীকে হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশের মাধ্যমেই সমন পাঠানো হয়। যেসব মামলা বড় এবং আসামিরা দুর্ধর্ষ তাদের ক্ষেত্রে পুলিশকেই সতর্কতার সঙ্গে আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে হয়। তাই এই মামলাগুলোর সাক্ষীরা যেন নির্ধারিত দিনে হাজির হন সেটা পুলিশেরই নিশ্চিত করা উচিত।’
যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম বলেন, আদালত থেকে যেসব সমন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসে, সেগুলো সময়মতোই সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। থানাগুলো তা সাক্ষীদের কাছে পৌঁছে দেয়।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ১২ জুন তানোর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের রমজান আলীর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। বাড়িটি থেকে রমজানসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন রমজানের ছেলে ইস্রাফিল আলম এবং ইস্রাফিলের স্ত্রী রুমেসা বেগমও। দুর্ধর্ষ জঙ্গি হাতকাটা সোহেল মাহফুজ এই রুমেসা বেগমের দুলাভাই। পুলিশ বাড়িতে সেদিন সোহেল মাহফুজকে না পেলেও পেয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র এবং সুইসাইডাল ভেস্ট। এ নিয়ে মামলা হলে পুলিশ সোহেল মাহফুজসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে।
সুত্রঃ আমাদের সময়