ফেনীর সোনাগাজীর সেই আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল নিজের মাদরাসায় তাঁর হাত-পা বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নুসরাত।
গতকাল রবিবার দুপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল দুজন পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। তাঁর মা শিরিনা আক্তার বলেন, ‘মেয়ের মৃত্যুযন্ত্রণার সেই চারটি দিন ছিল আমার কাছে বিভীষিকার। এখনো আমার নির্ঘুম রাত কাটে। আমার পরিবারের সদস্যদের সেদিন প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি আশাবাদী উচ্চ আদালতেও ফাঁসি বহাল থাকবে।’
মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও আসামিপক্ষ প্রকাশ্যে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। এ কারণে বাড়ির বাইরে গেলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।’
দেশ-বিদেশের আলোচিত ঘটনা ছিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ভেতরে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা। ওই বছরের ২৭ মার্চ মাদরাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নিজ অফিসকক্ষে ডেকে নুসরাতকে যৌন হয়রানি করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা মামলা করলে ওই দিনই অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে সিরাজের অনুসারীরা নুসরাতকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত রাজি না হলে তাঁর হাত-পা বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে সন্ত্রাসীরা সরে পড়ে। তাঁর চিৎকারে ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর স্থানান্তর করা হয় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানেই চার দিন সংকটাপন্ন অবস্থায় থেকে মারা যান তিনি।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। পরে আসামিদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আটকে আছে আপিলের শুনানি।
সুত্রঃদৈনিক কালেরকন্ঠ