পুরান ঢাকার আদালত চত্ত্বর থেকে পুলিশকে আক্রমণ করে ‘ছিনতাই হওয়া’ আনসার-আল-ইসলামের দুই জঙ্গি দেশেই আছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে তারা দুজন পৃথক স্থানে অবস্থান করছে।
আদালত থেকে লাপাত্তা এই জঙ্গিদের একজন সোহেল নারায়ণগঞ্জের একটি বাসায় অন্তত দুবার যাওয়া-আসা করেছেন বলে জানতে পেরেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের সদস্যরা।
নারায়ণগঞ্জের ওই বাসায় থাকতেন সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম শিখা। তার কাছেই আসা-যাওয়া ছিল সোহেলের। গোপন খবরে শুক্রবার রাতে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে শিখা ও তাকে আশ্রয় দেয়া হুসনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেন সিটিটিসির সদস্যরা।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের নানা দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
আদালত থেকে পালানোর পর শিখার নারায়ণগঞ্জের বাসায় সোহেলের যাতায়াত ছিল কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুইবার গিয়েছিল। আমরা অভিযানে সোহেলকে পাইনি। পলাতক জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।’
গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্ট ভবনের সামনে থেকে আনসার আল ইসলামের সদস্য মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।
আয়মানের পরিকল্পনা ও শিখার সমন্বয়ে জঙ্গি ছিনতাই
ঢাকা আদালত চত্বর থেকে মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে ইমরান, আবু সিদ্দিক সোহেল, মো. আরাফাত রহমান ও আব্দুস সবুরকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা হয়।
এই পরিকল্পনার নির্দেশ আসে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্ব আমির আবু ইমরান ওরফে ওসমানের কাছ থেকে। আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাটি করেন আনসার আল ইসলামের আসকারি বিভাগের প্রধান আয়মান ওরফে মশিউর রহমান। আয়মানের পরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গি ছিনতাইয়ে অংশ নেয়া সংগঠনটির সদস্য ও হাজতে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ও সমন্বয়ের কাজটি করেছেন ফাতেমা তাসনীম শিখা।
জঙ্গি ছিনতাইয়ে অংশ নেয়া সদস্যরা ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দুই ভাগে ভাগ হয়ে আদালত চত্বরে অবস্থান নেন। আর পুরো কার্যক্রম কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করেন পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা আয়মান ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা শিখা।
আদালত চত্বর থেকে মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেয়ার পর দুই ভাগে ভাগ হয়ে জঙ্গিরা পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, একটি গ্রুপ সদরঘাট হয়ে পালিয়ে যায়, বাকিরা অন্যপথে। সবাই গিয়ে একটি আনসার হাউজে (শেল্টার হাইজ) মিলিত হয়। সেখান থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে মইনুল হাসান শামিম ও সোহেলকে পৃথক স্থানে রাখা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে শিখা এই জঙ্গি ছিনতাইয়ে সমন্বয়ের কাজটি কীভাবে করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘হাজতে স্বামী-স্ত্রী কথা বলেছে। তারা ইশারা ইঙ্গিতে কথাগুলো বিনিময় করেছে। আমরা যারা সার্ভিলেন্সের দায়িত্বে ছিলাম, তাদের চোখ এড়িয়েই তারা কাজটি করেছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের সময় আদালত চত্বরে পরিকল্পনাকারী আয়মান ও সমন্বয়কারী শিখা দুজন আশপাশেই ছিলেন।’
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গি ছিনতাইয়ের দিন আদালতে বাবার সঙ্গে এসেছিলেন সোহেলের স্ত্রী শিখা। সেদিন কৌশলে বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান শিখা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বয়ের কাজটি করেন।
সিটিটিসি জানিয়েছে, ফাতেমা তাসনীম শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন সাইমনের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন তিনি। পরবর্তী সময়ে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
সুত্রঃ নিউজ বাংলা ২৪.কম