বরগুনার পাথরঘাটায় আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. জব্বার খান তার স্কুলের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই অভিযোগে শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ৮ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত রোববার (২৩ এপ্রিল) ছাত্রীর বাবা কবির খান বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পাথরঘাটা পৌর সভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আকনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এর আগে, পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদারের কাছে জবানবন্দি দেয় ওই এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তার বাবা। বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রীকে উপহার দেওয়া ও মোবাইলে আপত্তিকর বার্তা পাঠানোর বিষয়টি ওই প্রধান শিক্ষকের সামনেই ইউএনওকে দেখায় ওই ছাত্রী।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুফল চন্দ্র গোলদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করছেন। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ওই ছাত্রীর বাবা জানান, নবম শ্রেণিতে উঠার পর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আ. জব্বার নানা কৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে আমার মেয়ের সঙ্গে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। গত ১৩ মার্চ স্কুলে শিক্ষা সফরের কথা বলে মেয়েকে বরিশালে নিয়ে আবাসিক হোটেলে রাত যাপনও করেন। বরিশাল থেকে ফেরার পর মেয়ের শারীরিক অসুস্থতা দেখে তার কাছে জানতে চাইলে মেয়ে সব ঘটনা খুলে বলে। মানসম্মান রক্ষায় প্রধান শিক্ষক আ. জব্বারকে আমার মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি বাল্যবিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে এ ব্যাপারে সব ঘটনা জানিয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বিচার চেয়ে দরখাস্ত করেছি।
এদিকে বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওই শিক্ষকের পক্ষে ছাত্রীকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সুরাহা করার চেষ্টা করেন।
অপরদিকে, বুধবার বিদ্যালয়ের জরুরি সভায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং ৮ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুফল চন্দ্র গোলদার জানান, ঘটনাটি সত্য। ভিকটিম মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সব প্রমাণাদি আমার কাছে জবানবন্দিতে উপস্থাপন করেছে। শিক্ষার্থীর (ছাত্রী) বয়স কম হওয়ায় আইনগতভাবে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি। তবে শারীরিক ও মানসিক দিক দেখিয়ে গত ১৯ মার্চ আমার কাছে বিয়ের অনুমতি নিতে এসেছিলেন প্রধান শিক্ষক ও তার ছাত্রী। আমি তাদের অনুমতি দেইনি। বিষয়টি বরগুনা জেলা প্রসাশককে (ডিসি) অবহিত করে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, আমরা বিষয়টি বিদ্যালয় কমিটিসহ সব শিক্ষকদের নিয়ে বুধবার (২৬ এপ্রিল) জরুরি সভা ডেকেছি। ওই সভায় প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলে তিনি মোবাইলটি রিসিভ করে তার সহকারী শিক্ষক মো. আলামিন ফোরকানকে ধরিয়ে দেন। ফোরকান বলেন, স্যার লজ্জায় আপনার সঙ্গে কথা বলবেন না।
পাথরঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি তরিকুল ইসলাম রেজা বলেন, যেখানে বিদ্যালয়ের ছাত্রী শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়, সেসব কুলাঙ্গার শিক্ষকদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
পাথরঘাটা থানার ওসি শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এমন কোনো ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্রঃ ডেইলি-বাংলাদেশ