প্রবাসীদের অনেকেই জেনে না জেনে জঙ্গি সংগঠনে অর্থায়ন করছেন। আর জঙ্গিরাও অভিনব কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে মসজিদ, মাদরাসার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে সংগঠন পরিচালনা অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি কিনছে।
মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরে সিলেট দপ্তরে চার জঙ্গি আটকের বিস্তারিত জানাতে প্রেস ব্রিফিং করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। এ সময় জঙ্গি সংগঠনে অর্থায়নে প্রবাসীদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন র্যাব-৯ গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
এর আগে গতকাল সোমবার (৮ মে) রাতে সিলেট সদর উপজেলার এয়ারপোর্ট থানাধীন বড়শলা এলাকায় রাতভর অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার চার সদস্যকে আটক করেন বাহিনীর সদস্যরা। আটকদের মধ্যে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের শুরা সদস্য ও দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুনও রয়েছেন। তারা সবাই পাহাড়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি।
মায়মুনসহ আটক অন্যান্যরা হলেন- মো. আবু জাফর, মো. আক্তার কাজী, সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লা। মায়মুনের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়। আবু জাফর, আক্তার কাজী ও রাজ্জাক মোল্লার বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। অভিযানে তাদের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকাসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে র্যাব।
সিলেট থেকে চার জঙ্গি আটক ও তাদের অর্থায়নের বিষয়টি তুলে ধরে খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গি সংগঠনে বিদেশ থেকে কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। প্রবাসীদের অনেকে জেনে শুনে টাকা পাঠাচ্ছেন। কেউবা না জেনে অর্থায়ন করেছেন। প্রতি ৪-৫ মাস পর পর ২০ লাখ টাকা করে এই সংগঠনে এসেছে। এই অর্থ আমীরের নির্দেশে বিভিন্নভাবে তারা মসজিদ, মাদরাসার কথা বলে সংগ্রহ করতেন। সেসব অর্থের যোগানদাতা কিছু ব্যক্তির নাম পেয়েছে র্যাব। যাদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আব্দুল্লাহ মায়মুনের স্ত্রী, বাবা-মাও লন্ডনে থাকেন। তিনি অভিনব কৌশলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের জন্য অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের সহায়তা দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি তিনি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সাথে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সেতুবন্ধন কাজ করেন।
এর আগে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণের নিখোঁজ হন। নিখোঁজদের পরিবার কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। নিখোঁজের ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তখন র্যাব নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র্যাব জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সক্রিয়তার তথ্য পায়। জানা যায়, সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) নামে সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
র্যাব-৯ গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৬৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ’র ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আমরা আইনের আওতায় আনি। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এ সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান মাহমুদ, দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ মায়মুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শুরা সদস্য ও দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ সিলেট এলাকায় অবস্থান করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৯’র যৌথ অভিযানে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার বড়শালা বাজার এলাকা হতে এ চারজনকে আটক করে।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ মায়মুন ২০১৩ সালে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। তিনি আনসার আল ইসলামের সিলেট বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি নেতা চাকুরিচ্যুত মেজর জিয়ার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন মায়মুন।
২০১৯ সালে বগুড়ার একটি সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। এক বছরের বেশি সময় তিনি কারাভোগ করেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে জামিন হলে তিনি মুক্তি পান। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
সুত্র: বাংলানিউজ২৪.কম