অনলাইনে ফিলিস্তিন, মায়ানমার, ইরাকসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হয়ে এক দশক আগে জঙ্গিবাদের পথে পা বাড়ান সিলেটের আব্দুল্লাহ মায়মুন। জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যুক্ত হয়ে তিনি এখন নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম শুরা সদস্য ও দাওয়াতী শাখার প্রধান। সোমবার রাতভর সিলেট নগরের বিমানবন্দর থানাধীন বড়শালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকেসহ ৪ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৯।
আব্দুল্লাহ মায়মুন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার হাফিজ মাওলানা মাহমুদ হোসাইনের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন ফরিদপুরের চরভদ্রসন এলাকার শেখ আব্দুস ছালাম মাস্টারের ছেলে মো. আবু জাফর, চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মৃত মোস্তফা কাজীর ছেলে মো. আক্তার কাজী ওরফে সাইদ ওরফে আইজল এবং গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরের মৃত আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার ছেলে সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লা। তারা সবাই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্য। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটে র্যাব-৯ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, অনলাইনে ফিলিস্তিন, মায়ানমার, ইরাকসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হন আব্দুল্লাহ মায়মুন। এরপর ২০১৩ সালে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’ যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সংগঠনটির সিলেট বিভাগীয় মাসূল/প্রধান হন।
আনসাল আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি নেতা চাকুরিচ্যুত মেজর জিয়ার সঙ্গে মায়মুনের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি জিয়ার বাসায়ও তার (মায়মুন) নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ২০১৯ সালে বগুড়ায় একটি সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় আব্দুল্লাহ মায়মুন গ্রেপ্তার হন এবং এক বছর কারাভোগের পর ২০২০ সালের শেষের দিকে জামিনে মুক্ত হন।’
তিনি বলেন, ‘নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শুরা সদস্য ও দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ সিলেট এলাকায় অবস্থান করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে। এরপর সোমবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৯ যৌথ অভিযান চালিয়ে সিলেটের বড়শালা বাজার এলাকা থেকে ৪ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়।’
‘আব্দুল্লাহ মায়মুন অভিনব কৌশলের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন’ উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পাশাপাশি তিনি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সেতুবন্ধন কাজ করেন।’
র্যাবর এই কর্মকর্তা বলেন, “২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণের নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তখন র্যাব ফোর্সেস নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র্যাব জানতে পারে যে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’-এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।”
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৬৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’-এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আমরা আনি। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান মাহমুদ, দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব।’
গ্রেপ্তারকৃত চারজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ