আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দেয় নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্যরা। নতুন সংগঠনটির সদস্যরা একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিল। এখন সমতলে এসে তারা আবারও আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন হামলার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ৯ মে সকালে সিলেটের বিমানবন্দর বড়শালা এলাকার একটি বাড়ি থেকে শারক্বিয়ার দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুনসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় র্যাব।
র্যাব জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় পুরনো সংগঠনগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ থেকে কয়েকজন বের হয়ে শারক্বিয়া গড়ে তোলে। সংগঠনটির সদস্যরা সদস্য সংগ্রহ করে সংগঠিত হয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়ে আবাসিকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, শারক্বিয়ার সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রমও থেমে নেই। অনলাইন ও অফলাইন সব মাধ্যমেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত আছে। যখনই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তখনই অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সংগঠনগুলোর ওপর নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি সংগঠন শারক্বিয়ার কার্যক্রমের তথ্য পাওয়ার পর গত বছরের অক্টোবর থেকে পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালানো শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সংগঠনটির ৭৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, যেসব জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তারা পাহাড় ছেড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সংগঠনের আমিরের নির্দেশে পাহাড় ছেড়েছে প্রশিক্ষণরত জঙ্গিরা। আত্মগোপনে থেকেও তারা নানাভাবে অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছি আমরা।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার যেসব সিনিয়র নেতা রয়েছেন, তারা সমতলে এসে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। শারক্বিয়ার সঙ্গে যারা জড়িয়ে পড়েছে, তারা মূলত আগে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, বিশেষ করে আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিল। বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নাশকতার বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে এসব সদস্যের। যেকোনও সময় যেকোনও জায়গায় হামলা চালানোর দক্ষতা রয়েছে তাদের।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের যেসব সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের পেছনে পরিবারের আর্থিক সহায়তা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অর্থে পাহাড়ি এলাকায় বিভিন্ন ঘাঁটি তৈরি করে সদস্যরা। খবর পেয়ে অভিযান চালালে তারা পাহাড় ছেড়ে পালায়। এখন শারক্বিয়ার সদস্যরা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় রয়েছে। তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে রয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মায়মুন ২০১৩ সাল পর্যন্ত আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সংগঠনটির সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে তার বেশ সখ্য ছিল। সর্বশেষ মায়মুন শারক্বিয়ার সিলেট বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনি ১৫ লাখ টাকা অনুদান নিয়ে আসেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে আবদুল্লাহ মায়মুন বগুড়ায় সন্ত্রাসবিরোধী একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। পরে জামিন বাতিল হলেও মায়মুন আত্মগোপনে চলে যান। মূলত মায়মুন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে নতুন সংগঠনটির যোগাযোগ করিয়ে সেতুবন্ধ করে দিয়েছিলেন। মায়মুনের মাধ্যমেই নতুন সংগঠনকে ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেয় আনসার আল ইসলাম।
শারক্বিয়ার আমির কোথায়?
জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার আমির আনিসুর রহমান মাহমুদের অবস্থান সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে তারা ধারণা করছে, দেশের ভেতরে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। আত্মগোপনে থেকেও তিনি পাহাড় থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করা জঙ্গি সদস্যদের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের বিষয়ে আনিসুর খোঁজখবর রাখছেন বলে র্যাবকে জানিয়েছে গ্রেফতার সদস্যরা।
মায়মুনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার
র্যাবের দাবি, শারক্বিয়ার দাওয়াতি শাখার প্রধান গ্রেফতার আব্দুল্লাহ মায়মুনের সঙ্গে চাকরিচ্যুত জঙ্গি মেজর জিয়ার বেশ সখ্য ছিল। তারা বিভিন্ন সময় বৈঠক করেছেন। এমনকি রাজধানীর ভেতরেও তারা বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। শারক্বিয়াকে অনুদানের ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার পেছনে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছিল মেজর জিয়ার। গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মেজর জিয়ার সঙ্গে মায়মুনের সাক্ষাৎ হয়। আত্মগোপনে চলে যাওয়ার কারণে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়।
সুত্রঃ বাংলা টট্রিবিউন