ফরিদপুরের সালথায় জ্বীন ছাড়ানোর কথা বলে চেতনাশক ওষুধ খাইয়ে একটি পরিবারের সবাইকে অচেতন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালকার লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সময় স্থানীয়রা অভিযুক্ত দুই প্রতারককে আটক করে পুলিশে দেয়। বর্তমানে ওই দুই প্রতারক কারাগারে রয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এখনো অসুস্থ হয়ে বাড়িতে কাতরাচ্ছেন।
উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের তেলি সালথা গ্রামের প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বরের (৭৫) বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী আলমগীর মাতুব্বর ঘটনার ভয়াবহ বর্ণনা দেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কয়েক বছর ধরে আমার বাবা আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন। তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও ভাল করতে পারিনি।
একপর্যায় পরিবার পক্ষ থেকে তাকে কবিরাজী চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী মোড়হাট গ্রামের আফসার শেখ নামে এক ব্যক্তি আমাদের বাড়িতে এসে বলে, আমার পরিচিত ২ জন কবিরাজ (ফকির) আছে, তারা প্যারালাইসিস ভাল করতে পারে। তারা বর্তমানে তেলি সালথা গ্রামের প্যারালাইসিস রোগী সিদ্দিক মোল্যার চিকিৎসা করছে।
ওই দুই কবিরাজ হলেন, মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার বড়তলা গ্রামের মৃত নুরুল শেখের ছেলে মো. রবিউল ওরফে রবি শেখ (৪৭) ও ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার গহেশপুর গ্রামের মৃত ছবেদ জোয়াদ্দরের ছেলে আমিনুল জোয়াদ্দার (২৪)।
পরে আফসারের কথামতো গত মঙ্গলবার (১৬ মে) কবিরাজ রবি আমিনুলকে খবর দিয়ে আমাদের বাড়িতে আনি। তারা (কবিরাজরা) এসে আমাদের বলেন, আপনাদের বাড়ির সকলকে জ্বীনের আসর করেছে। তাই আপনার বাবার রোগ ভাল হচ্ছে না। আগে সকলের জ্বীন ছাড়াতে হবে। জ্বীন ছাড়ানোর পর আপনার বাবা ভাল হয়ে যাবে। জ্বীন আমরাই ছাড়াতে পারি। এই জন্য বাড়িতে আসর বসিয়ে সকলকে তবারক খাওয়াতে হবে।
বুধবার (১৭ মে) গভীর রাতে আসর বসানোর জন্য আমাদের পরামর্শ দেন কবিরাজরা। আর তবারক তৈরির জন্য চিনি, দুধ, কলা ও আলা চাল এনে রাখতে বলেন। তবে আমার বাবাকে ভাল না করা পর্যন্ত তারা কোনো টাকা-পয়সা নিবেন না বলে জানান। তাদের কথামতো বুধবার রাতে আমাদের বাড়িতে আসর বসানোর ব্যবস্থা করি। ঘটনার রাতে আফসারসহ ওই দুই কবিরাজ এসে প্রথমে আমাদের তিনটি বসতঘরের মাঝে ৯টি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে এবং দুধ, কলা, চিনি ও চাল দিয়ে তারা নিজেরাই তবারক তৈরি করে।
পরে রাত ৩টার দিকে ঘরের ভেতরে পরিবারের সকলকে নিয়ে কবিরাজরা জ্বীন ছাড়ানোর আসর বসায়। এ সময় তাদের তৈরি তবারক পরিবারের সকলকে খাওয়ানো হয়। তবরাক খাওয়ার পরপরই সবারই ঘুম ঘুম ভাব আসে। একপর্যায় সবাই যার যার মতো ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে আমার ভাবি শারমিন বেগম তবারক খেয়ে বমি করায় সে বেশি অসুস্থ না হলেও ঘুমিয়ে পড়েন।
আলমগীর আরো বলেন, এই সুযোগে কবিরাজরা আমার ঘরের আলমারী ভেঙ্গে নগদ ৩ লাখ টাকা, ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণের গহনা ও দুটি মোবাইল ফোন লুটে নিয়ে যায়। পরে বড় ভাইয়ের ঘরে ঢুকে ভাবির গলার চেন ধরে টানাটানি করলে তিনি ঘুম থেকে উঠে পড়েন। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে স্থানীয় এগিয়ে এলেও আমরা সবাই অচেতন অবস্থায় ঘুমিয়ে ছিলাম। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে সালথা বাজার থেকে আফসার ও কবিরাজ রবিউল শেখকে আটক করে মারধর দিয়ে পুলিশে দেয়। তবে আরেক কবিরাজ আমিনুল পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি, আমার স্ত্রী সালেহা বেগম, মা নবিরুন বেগম, ভাই কবির মাতুব্বর, ভাবি শারমিনসহ আমাদের ছেলে-মেয়েরা সবাই এখনো পুরোপুরি অসুস্থ হয়নি। সবাই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। এদিকে আমরা অসুস্থ ও অচেতন থাকা অবস্থায় আমার চাচা মান্নান মাতুব্বর বাদী হয়ে প্রতারকদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় লুট হওয়া টাকা ও স্বর্ণালকার কম উল্লেখ্য করা হয়েছে। মামলায় নগদ ৫৩ হাজার টাকা, ১ ভরি ৩ আনা ওজনের সোনার গহনা উল্লেখ্য করা হয়েছে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, তারা মূলত চোর। নগদ টাকা ও স্বর্ণালকার নেওয়ার সময় স্থানীয়দের কাছে ধরা পড়লে পুলিশ চুরি হওয়া সবকিছু জব্দ করে। পরে অভিযুক্ত প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শুক্রবার ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ