চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি নুরানি মাদ্রাসার শিক্ষক ও জামে মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে শিশু বলাৎকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতনের পর স্থানীয় মাতব্বররা সালিস করে অভিযুক্তকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর অর্ধেক টাকা মসজিদে ও অর্ধেক টাকা আমাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বিচার আমরা মানিনা, কিন্তু স্থানীদের চাপে বাধ্য হয়েছি।
শিশুটির পরিবারের দাবি, নির্যাতনকারী বিরুদ্ধে একাধিক শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ থাকলেও তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন, সালিশ নিয়েও প্রহসন হচ্ছে।
গত ১১ মে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের চাকলা পড়জিপাড়া গ্রামে শিশু নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
নির্যাতনকারী নাম আব্দুল মবিন। তিনি চাকলা নূরানি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং ওই মসজিদের ইমাম।
এদিকে বলাৎকারের ঘটনার পর মাওলানা মবিন সটকে পড়েন। পরে মসজিদ ও মাদ্রাসায় তিনি অনুপস্থিত থাকায় রোববার সালিশে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়।
নির্যাতনের শিকার শিশু, তার পরিবার, মাদ্রাসার কমিটি ও এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, গত ১১ মে রাতে ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল মবিন শিশুটির সঙ্গে এশার নামাজ পড়েন। নামাজের পর মাওলানা মবিন মোটরসাইকেলে করে শিশুটিকে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং ভাত খেতে দেন। এসময় মাওলানার স্ত্রী ও সন্তানরা কেউ বাড়িতে না থাকার সুযোগে তিনি শিশুটিকে বলাৎকার করেন। পরে ভয় দেখিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিশুটিকে বাড়িতে রেখে আসেন।
এদিকে নির্যাতনের শিকার শিশুটি কাউকে কিছু না বললেও অস্বস্তি বোধ করলে এক পর্যায়ের মা-বাবা সব খুলে বলে।
শিশুটির মা জানান, স্বামী ধান কাটতে গিয়েছিল। বাড়িতে না থাকায় ঘটনাটি কাউকে বলতে পারিনি। গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) স্বামী বাড়ি এলে তাকে ঘটনাটি জানানো হয়। পরে স্থানীয়রা বাইরে না জানাতে চাপ দেয়। ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ১৯ মে রাতে চাকলা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে চাকলা নূরানী মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী রাজেকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক সালিশের আয়োজন করে।
তিনি জানান, সালিশে মাওলানা আব্দুল মবিন নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অর্ধেক টাকা জামে মসজিদে ও অর্ধেক টাকা আমাদের দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং টাকা দেয়ার জন্য ১৫দিন সময় দেয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা বলেন, আমরা গরীব ও অসহায় মানুষ। এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে ইজ্জতের ভয়ে কোনো মামলা করিনি। তবে আমি ন্যায্য বিচার পাইনি। আমরা ওই মাওলানার বিচার দাবি করছি। তবে তিনি স্থানীয় চাপে প্রশাসনের কাউকে অভিযোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সালিশের সভাপতি হাজী রাজেকুল ইসলাম সালিশের সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাকলা নূরানি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ২০ মে বিকালে এক জরুরি সভা করে মাওলানা আব্দুল মবিনকে স্থায়ীভাবে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। সেই সঙ্গে মসজিদের ইমামতির পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রাজেকুল ইসলাম আরও জানান, এলাকার শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে এবং মুসুল্লিদের অনুরোধে বিষয়টি সামাজিকভাবে মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। আপনাদের ভাষায় আইনি ভিত্তি না থাকলেও এলাকার স্বার্থে সমাধানটা করা হয়েছে।
তার দাবি, সালিশে শিশুটির স্বজনরা ছিল। শিশুটির বাবাও স্বাচ্ছন্দ্যে বিচার মেনে নিয়েছেন। তাই শিশুটির বাবাকে অভিযোগ দায়েরের ভয় ভীতি দেখানোর প্রশ্নই ওঠেনা। আর শালিসে অভিযুক্ত ব্যক্তির এক স্বজন টাকা দেওয়ার জিম্মা নিয়েছেন। তবে এখনও টাকা হাতে পাইনি।
এদিকে এলাকার কয়েকজন শিশু জানায়, ওই হুজুর আমাদের ভালো ভালো খাবার খেতে দেয় এবং পাশে বসিয়ে খুব আদর ও খারাপ কাজ করে। আমরা ভয়ে কাউকে কিছু বলি না। এ সময় ওই এলাকার ৮-১০ জন শিশু-কিশোরদের যৌন নির্যাতনের মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় মাওলানা আব্দুল মবিনের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি এবং তার ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে দাইপুখুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর রেজা বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে সত্য হলে ওই মাওলানার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ বলেন, অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, ঘটনা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবো।
সুত্রঃ একাত্তর নিউজ