লিবিয়ায় গদ্দাফির পতনের পর বিশৃঙ্খলার সময়, ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর হয়ে লড়াইয়ের জন্য ২৩ জিহাদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন লিবিয়ার একটি আদালত। সোমবার এই রায় ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে। ৩২০ জন অভিযুক্ত আইএস জিহাদির প্রথম দল এটি, যাদের বিচার ও সাজা দেওয়া হল। হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধের দায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
আদালত একই অভিযোগে আরো নয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং তাদের তিন থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। প্রসিকিউশন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মিসরাতাতে গত আগস্টে শুরু হওয়া বিচারের পর আরো ১৪ জন অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা ফিলিস্তিনি, সুদানী এবং লিবিয়ান।
সকলেই ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে হেফাজতে ছিল এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগদানের পাশাপাশি হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। এছাড়াও, আদালত তিন নাবালকের প্রত্যেককে ১০বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী লোতফি মোহায়েচেম।
সন্দেহভাজনরা কারাগারে নীল পোশাক পরিহিত, দাড়িওয়ালা এবং মাথা কামানো অবস্থায় হাজির হন। সিরতে যুদ্ধে নিহতদের স্বজনরাও আদালত কক্ষে ঠাসাঠাসি করে বসা ছিল।
মোহাইচেম বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের পরিবারের আইনজীবী হিসেবে আমরা আদালতের রায়কে খুবই সন্তোষজনক এবং খুব ন্যায্য বলে দেখছি। আদালত যাদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছিল তাদের সাজা দিয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত প্রমাণ ছিল তাদের খালাস দিয়েছে।’
রায় পড়ার সময় ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’ এবং ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি’ বলে চিৎকার ও করতালিতে রুম ভরে যায়। আইএসের নৃশংসতার শিকার মুস্তাফা সালেম ত্রাবুলসি নামের এক ব্যক্তি আদালতের বলেন, ‘আমার ছেলে নিখোঁজ। আমার এক আত্মীয়কে সিরতে স্কয়ারে হত্যা করা হয়েছে।
আমি এই রায়কে স্বাগত জানাই।’
মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার সাহায্যে বিতাড়িত হওয়ার আগে আইএস সির্তে এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেরনায় ঘাঁটি স্থাপন করে এবং কয়েক ডজন মিলিশিয়া ও জিহাদি গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলার মধ্যে সুযোগ নিয়েছিল। তারা ২০১৫ সালে ত্রিপোলির একটি হোটেল হামলা চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করে। এর আগে আইএস জঙ্গিরা বেশ কয়েকজন মিসরীয় খ্রিষ্টানকে হত্যা ও অপহরণ করে। ২০১১ সালের ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহের পর লিবিয়া এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশৃঙ্খলা ও অনাচারে নিমজ্জিত হয়েছিল। যা ফলে দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসক গাদ্দাফিকে অপসারণ ও হত্যা করা হয়।
সূত্র : এএফপি, কালেরকন্ঠ