দেশে মাস আটেক আগে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে যে নতুন জঙ্গি সংগঠন আলোচনায় আসে, সেই সংগঠনের ‘প্রতিষ্ঠাতা’ শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার ডেমরা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ তাদের ধরা হয় বলে ভাষ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের।
সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডেমরা এলাকার থেকে শামিন মাহফুজকে তার স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
“বাসা থেকে নয়। রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়; তারা হয়তো কোথাও যাচ্ছিল।”
এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার কে এন রায় নিয়তি।
সিটিটিসির হাতে গ্রেপ্তার শামিন মাহফুজ ১৯৯২ সালে রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও ১৯৯৪ সালে এইচএসসিতে পাস করেন। দুই পরীক্ষাতেই মানবিক বিভাগ থেকে স্ট্যান্ড করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বন্ধুত্ব হয় নাথান বমের সঙ্গে, যিনি এখন পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ‘বম পার্টি’র প্রধান।
মাস্টার্সের পরে রাজধানীর একটি কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন শামিন । এরপর শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
র্যাব আগে জানিয়েছিল, শিক্ষকতার কারণেই জঙ্গি সংগঠনে ‘স্যার’ হিসেবে পরিচিতি পান শামিন।
নতুন এ জঙ্গি সংগঠন এবং পাহাড়ের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছত্রছায়ায় তাদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে ২০২২ সালের অক্টোবরে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন এ সংগঠনের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর দেশে নতুন আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বের কথা জানান।
ওই সময়ের দুই মাস আগে কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র গত ২৩ অগাস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর না ফেরায় থানায় জিডি করেছিল পরিবার। পরে জানা যায়, নিরুদ্দেশ ওই তরুণদের কয়েকজনকে শেষবার দেখা গিয়েছিল চাঁদপুরে।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং সব কিছু বিবেচনা করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সে সময় ধারণা হয়, ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়েই’ লাপাত্তা হয়েছেন ওই তরুণরা। র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি সিটিটিসি ইউনিটের সদস্যরা তখন তাদের খোঁজে মাঠে নামেন।
অক্টোবরের শুরুতে কয়েকজনকে উদ্ধার করে র্যাব জানায়, ওই তরুণরা নতুন এ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন।
পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ) বা ‘বম পার্টি’র ছত্রছায়ায় এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথাও জানানো হয় র্যাবের তরফে।
তবে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র নেতৃত্ব নিয়ে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট ও র্যাব দুই ধরনের তথ্য দিয়ে আসছে।
সিটিটিসির ভাষ্য, আগাগোড়াই জামাতুল আনসারের ‘প্রধান ব্যক্তি’ হলেন গাইবান্ধার সাঘাটার ৪৭ বছর বয়সী শামিন মাহফুজ। অন্যদিকে র্যাব জানায়, সংগঠনটির ‘প্রধান ব্যক্তি’ বা আমির হচ্ছেন কুমিল্লার আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। শামিন এ সংগঠনের ছয় নম্বর শুরা সদস্য।
র্যাব আগে জানিয়েছিল, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময় শামিন মাহফুজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হন। গবেষণার বিষয় ছিল ‘পাহাড়ি জাতি-গোষ্ঠী’।
গবেষণার অংশে হিসেবে তখন থেকে শামিন পাহাড়ে যেতেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দোছড়ি ইউনিয়নে তিনি লেবু বাগান করার জন্য জমিও কিনেছিলেন।
তবে গবেষণা ও খামারের আড়ালে ‘উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে’ যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১১ সালে বান্দরবানের থানচি থানার একটি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। জামিনে মুক্তি পান দুই বছর পর।
পরের বছর তিনি আবার গ্রেপ্তার হন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে। হাই কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পান ২০১৭ সালে। তখন থেকেই তিনি সস্ত্রীক নিখোঁজ ছিলেন।
জঙ্গি
সুত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম