প্রতীকি ছবি
কেউ মারছেন পায়ের জুতো খুলে, কেউ আবার চুলের মুঠি ধরে মারছেন হ্যাঁচকা টান, অবিরাম চলছে কিল চড় ঘুষি। উন্মত্ত জনতার মাঝে দুই মধ্যবয়সী নারীর চলছে বেধড়ক মারধর। মারের চোটে তখন পরনে থাকা শাড়ি, ব্লাউজ খুলে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
সুযোগ বুঝে ভিড়ের মধ্যেই টেনে-হিঁচড়ে খুলে নেওয়া হলো তাদের পোশাক। এরপর নগ্ন অবস্থাতেই চলছে মারধর। হাউহাউ করে কেঁদে চলেছেন দুই নারী। পাশে দাঁড়িয়ে মমতার সিভিক পুলিশ (ভলেন্টিয়ার)। কিন্তু, তাতেও কমছে না মারের দাপট।
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে এমন ভাবেই ভারতে আবারও ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ঘটনার সামনে এলো। মনিপুরের পরে এবার পশ্চিমবঙ্গে চোর সন্দেহে দুই মধ্যবয়সী নারীকে নগ্ন করে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ভাইরাল হলো সোশ্যাল সাইটে। এই ঘটনায় আবার নির্যাতিতা দুই নারীকেই উল্টে আটক করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে!
মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে ,শুক্রবার (২১ জুলাই) কলকাতায় শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে মনিপুরের ন্যাকেড প্যারেড কাণ্ডে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনিপুরের বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে মমতা বলেছেন, ‘বেটি বাঁচাও স্লোগান দিয়ে বেটিকে জ্বালানো হচ্ছে। মণিপুর জ্বলছে, সারা দেশ জ্বলছে। মহিলাদের ইজ্জত লুঠ করা হচ্ছে।’
মমতার এমন বক্তব্যের চব্বিশ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই বেরোতেই এবার খোদ মমতার রাজ্যে প্রকাশ্য দিবালোকে নগ্ন করে দুই নারীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল ! জানা যায় নারী নির্যাতনের এই ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই)। যে ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসে শনিবার (২২ জুলাই) সকালে।
আরও পড়ুন : জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানায় নিষেধাজ্ঞা, সমীক্ষার অনুমতি আদালতের
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে মালদার বামোনগোলা থানার পাকুয়াহাটে। এখানেই প্রতি মঙ্গলবার হাট বসে। হাটেই দুই নারীকে পকেটমার সন্দেহে আটক করা হয়। এরপরেই শুরু হয় মারধর।
উল্লেখযোগ্য বিষয় মারধরে এমন ঘটনায় পুরুষদের থেকে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল তুলনামূলক বেশি। ঘটনার খবর পেয়ে দু-তিনজন সিভিক ভলেন্টিয়ার ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও উন্মত্ত জনতার হাত থেকে দুই নারীকে ছাড়িয়ে নিতে পারেনি তারা। পরে মানিকচক থানার পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। শনিবার এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে ভিডিওটি তাদের নজরে আসার পরেই তারা ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে পাকুয়াহাটে দুই নারী চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। এরপর স্থানীয় নারী ব্যবসায়ীরা তাদের দুই জনকে মারধর করেছে। পরে উভয় তারা এলাকা ছেড়ে চলে যায় বা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ওই দুই নারী পুলিশে কোনো অভিযোগ করেনি। ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি।
যদিও এমন দাবি সম্পূর্ন খারিজ করে দিয়েছে নির্যাতিতার একজনের মেয়ে। তার দাবি নির্যাতিত দুই নারী তার মা ও কাকিমা। তারা হাটে লেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। এই সময় এক মিষ্টি বিক্রেতা তাদের চোর অপবাদ দেয়। এর পরেই তাদের বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনা ঘটে।
পরে সিভিক পুলিশ মারফত তাদের খবর দেয়া হয় এবং মারধরের ভিডিও দেখে মা ও কাকিমাকে শনাক্ত করেন তিনি। এরপর থানাতে গেলে তিনি জানতে পারেন তার মা ও কাকিমাকে আটক করে জেল হেফাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সোমবারের (২৩ জুলাইয়ের) আগে তাদের ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সুত্রঃ চ্যানেল24.কম