পর পর নাশকতা ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে অবশ্যই তারা এগোচ্ছিল। তবে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, ভারত ও বাংলাদেশে শরিয়তি শাসন প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যে ‘জেহাদ’ই ছিল তাদের পথ। আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন ফের কায়েম হওয়ার কথা মাথায় রেখে আল কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (আকিস) নামে জঙ্গি সংগঠনটি শরিয়তি শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গত চার-পাঁচ বছর ধরে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি স্লিপার সেলও তৈরি করেছে আকিস। ওই জঙ্গি সংগঠনের পরিকল্পনা ছিল, সংগঠন শক্তিশালী হলেই ‘সশস্ত্র সংগ্রামের’ মাধ্যমে ‘ক্ষমতা দখল’ করা।
ওই সংগঠনের পান্ডা, বাংলাদেশের নাগরিক আবদুল্লা তালহা ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তাকে জেরা করে এই সব তথ্য জানা গিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। সংগঠনের একের পর এক নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় তালহা ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে অন্য নামের আড়ালে বাংলাদেশে আল কায়দার শাখা তৈরি করছিল। ওই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল মূলত তরুণ ও যুবকরা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবরয়া এ সব তথ্য বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসটিএফ-কে। গত এক বছরে আকিস-এর বেশ কিছু সদস্য এ রাজ্য তো বটেই অসম, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের এসটিএফ-এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। ওই সব রাজ্যের এসটিএফ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় রেখে কাজ করছে। আপাতত তারা কাজ করছে আকিস-এর বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করার লক্ষ্যে।
এ দেশে আকিস-এর আসল নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আল কায়দা বার-ই-সাগির’। বাংলাদেশের ময়মনসিংহের আবদুল্লা তালহা উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দে এসেছিল পড়াশোনার জন্য। ২০১৮ সালে সেখান থেকেই আকিস গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকার কাউন্টার টেররিজ়ম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, তালহা এক-এক জায়গায় এক-এক নাম নিয়ে কাজ করত। তালহা ছাড়াও সফিউল্লা, মনসুর, ইকরামুল হক নাম নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাত, এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ পার বাংলায় কোচবিহারের ঠিকানায় সে নুর হোসেন নামে আধার কার্ড এবং ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, মেধাবী ও চৌখস তালহা একটা সময়ে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’-এর সঙ্গে জড়িত ছিল। পরে ভারতে এসে সে আল-কায়দার সঙ্গে জড়িত হয়। আকিস-এ তার দুই বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিল মেহেদি হাসান ওরফে উসমান এবং মহম্মদ ওরফে সামেদ আলি।
ওই দু’জনও বিভিন্ন রাজ্যে পরিচিত ছিল বিভিন্ন নামে। মেহেদি ও মহম্মদও বাংলাদেশের নাগরিক। বেঙ্গল এসটিএফ সূত্রের খবর, মেহেদিকে শেষ দেখা গিয়েছে অসমের বরপেটা জেলার গড়াইমারিতে। গত বছর, ওই একই সময়ে মহম্মদকে শেষ বার দেখা গিয়েছে হাওড়ার বাঁকড়ায়। এ দেশে একের পর এক আকিস-নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তারা বেপাত্তা। তালহার মতো তারাও বাংলাদেশের কোথাও আত্মগোপন করে আছে কি না, সেটা সিটিটিসি দেখছে।
বাংলা ছাড়াও অসম, ত্রিপুরা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় আকিস সংগঠন তৈরি করেছে। ধরপাকড় শুরু হওয়ায় আপাতত কিছুটা থমকে গিয়েছে সংগঠনের কাজ। বেঙ্গল এসটিএফ সূত্রের খবর, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকাকে ট্রানজ়িট পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছিল আল-কায়দা জঙ্গিরা। তার মধ্যে এ রাজ্যের কোচবিহারের দিনহাটা এবং বনগাঁর পেট্রাপোলের পাশাপাশি ত্রিপুরার সোনামুড়া, মেঘালয়ের তুরা, অসমের ধুবড়িও রয়েছে। ওই সব জায়গায় আকিস-এর সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
সুত্রঃ এই সময়