বাবার চাকরি সূত্রে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেড়ে উঠেছেন নাঈমা সুজানা। সপ্তাহ দুয়েক আগের এক ঘটনায় সেই চিরচেনা এলাকাটি এখন তার কাছে বড় অচেনা ঠেকছে।
সেদিন ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে অপরিচিত একটি আইডি থেকে তার কাছে একটি মেসেজ এসেছিল, যেটি খুলতেই দেখতে পান ‘ভয়ংকর’ এক ছবি।
ঘটনার বর্ণনায় নাঈমা বলছিলেন, “আমি ওইদিন এমনিতেই আমার ইন্সটাগ্রাম মেসেজ চেক করছিলাম এবং হঠাৎ এই ভয়ংকর ছবিটা দেখলাম। আমার একটা নরমাল সালোয়ার কামিজ পরা ছবিকে নগ্ন একটা ছবি বানিয়ে পাঠাইছে। কে এই কাজ করেছে, কেন করেছে- কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কারণ আইডিটা তো রিয়েল আইডি ছিল না। আমার ভয় লাগতে শুরু করল।”
ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত এই তরুণী নিজের করণীয় কী- তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
“তখন আমি সবার প্রথমে আপুকে বললাম। আপুই আমায় বললো যে এটা এডিট করা। কারণ এডিটেড ছবিটায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা ওয়েবসাইটের লোগো ছিলো। সেটা লিখে আমরা গুগলে সার্চ দিছিলাম এবং সিউর হলাম যে- এটা ফটোশপ না, এআই দিয়ে করা।”
ঘটনার পরম্পরার কথা বলতে গিয়ে এই ভুক্তভোগী বললেন, “আপু বললো, ফেইসবুকে এ নিয়ে একটা পোস্ট দিতে। আমি মূলত পোস্ট দেওয়ার পর আমার লিস্টের কেউ আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেনি। তবে এটা যখন ভাইরাল হলো এবং অন্য পেইজগুলো পোস্টটাকে পিক করলো, তখন র্যান্ডম মানুষ এসে উল্টা সেইসব কমেন্ট বক্সে এসে আমাকে ব্লেইম করা শুরু করল।
“কেউ বলেছে যে, আমায় চড়ানো উচিত। কেউ বলেছে, আমার কতবড় সাহস যে- এখনও আইডি পাবলিক করে রাখছি। মানে বিষয়টা এ রকম যে মাথাব্যথা হয়েছে, মাথা কেটে ফেলো।”
শঙ্কিত নাঈমা বললেন, “এখন আমায় ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে, কারণ বাসার কাউকে আমি এখনও কিছু জানাই নাই। আর আত্মীয়স্বজনকে তো ব্লক করে রাখছি। কিন্তু পোস্টটা যেহেতু ছড়িয়ে গেছে, আত্মীয়দের কেউ দেখলে তো নিশ্চয়ই বাসায় ফোন করে বলবে। দেখি, আমি নিজেই আব্বু-আম্মুকে জানাব আস্তে আস্তে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি পুলিশের কাছে যাই নাই। কারণ জানেনই তো আমাদের পুলিশ কেমন! পুলিশের কাছে গেলে তারা খুব একটা সহযোগিতা করবে না। উল্টা আমার সেই ছবি দেখতে চাইবে। তাছাড়া অভিযোগ করলে একটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তো করা লাগবে। কিন্তু আমি তো জানিই না এটা কে, কী তার পরিচয়।”
হয়রানির বিষয়টি পাবলিকলি পোস্ট করে যে ‘সাহসিকতা’ দেখিয়েছেন নাঈমা, তাতে অবশ্য ঘাবড়েছেন অপকর্মকারীই।
“পাবলিকলি যখন স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট করলাম, তখন ওই আইডি থেকে আমায় বারবার অনুরোধ করছে পোস্টটা নামিয়ে ফেলতে। বলছে, মজা করে এআই দিয়ে করেছে এটা।”
‘ভিডিওটায় কি সত্যিই আমি ছিলাম?’
এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর একই ধরনের হয়রানির কথা প্রকাশ্যে এনেছেন আরেক ভুক্তভোগী- সোশাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ নওরীন আফরোজ পিয়া। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ৯ সেকেন্ডের একটা নগ্ন ভিডিও ছড়িয়েছে, যাকে পিয়া বলে ভাইরাল করা হয়েছে।
ওই ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত দাবি করে পিয়া গত ৫ অগাস্ট ফেইসবুকে ৭ মিনিটের ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন।
তার ভাষ্যে, “সকাল থেকে একটা জিনিস ফেইস করে যাচ্ছি, আমি জানি যে আরও কয়েক সপ্তাহ আমার এটা ফেইস করা লাগবে। এই যে আপনারা আমার কমেন্ট সেকশন, বিজনেস পেইজ, টিকটক- সব জায়গায় বলছেন যে লিংক বের হইছে। কিন্তু ভিডিওটায় কি সত্যিই আমি? যারা আমায় চেনে, জানে; তারা জানে যে- ওটা আমি না।
“আমার ফ্যামিলি, আমি- কী পরিমাণ ট্রমাটাইজড, আপনাদের কোনো আইডিয়া আছে? আজ হুট করে ঘুম থেকে উঠে আমার জীবনটা পালটে গেল। এত এত মানুষ, যারা আমায় পছন্দ করতো, তারা আমায় এখন ছি ছি করছে। আমি যেখানে জিনিসটা করিনি, সেখানে আমি কেন এর দায়ভার নিব?”
এ ধরনের পরিস্থিতি যে সবার পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন, সেই সামাজিক বাস্তবতার কথাও বলেছেন পিয়া।
“আমি কিছুই করি নাই। তবুও আমায় মেন্টাল প্রেসার দেওয়া হচ্ছে। যার ফ্যামিলিতে এটা ঘটে, শুধু সেই জানে যে কী হচ্ছে। যারা এটা করেছেন, তাদেরকে বলছি, আপনারা মানুষকে এভাবে হ্যারাজ করবেন না। আমি কিছুটা স্ট্রং দেখে কথা বলতে পারছি। কিন্তু যারা সফট হার্টেড, তারা তো সুইসাইড করবে! আপনারা একটা মানুষকে বাধ্য করেন- সুইসাইড করতে।”
ঘটনার তিন দিন বাদে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি নিজেও জানতাম না- এই একটা ভিডিও আমার পুরো জীবনটাকে দুর্বিষহ করে দিবে। ঘুম থেকে উঠে নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে যখন মানুষের মেসেজ দেখি, ‘লিংক ভাইরাল হইছে, ৯ সেকেন্ড ভাইরাল’।
“আমি দেখে আকাশ থেকে পড়ছি। এটা তো আমি না। ওই মেয়েটার বডি স্ট্রাকচার, হাত আমার সাথে মিলে না। মেয়েটার হাতে ট্যাটু ছিলো। আর আমি এরকম টাইপের ভিডিও করি নাই কোনোদিন।”
পরিবারের অন্যদেরও যে সামাজিকভাবে হেয় হতে হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরতে গিয়ে পিয়া বলেন, “আমার আব্বু দিনাজপুরে বিজনেস করে। কিন্তু আব্বু এখন দোকানে যাওয়া ছেড়ে দিছে।
“কারণ গেলেই মানুষজন আব্বুকে ডিরেক্টলি জিজ্ঞেস করতেছে যে- ‘কী হইছে?’। আব্বু কিভাবে কী নিছে, আমি জানি না।”
পিয়া বলতে থাকেন, “আমার মা আমার ফেইসবুকের প্রতিটা কমেন্ট পড়ে। সে যখন ওইদিন এত এত নেগেটিভ কমেন্ট দেখছিল, আমায় ফোন করে বলতেছে যে, ‘কী হইছে?’। আমি তাকে বললাম যে, এই এই ব্যাপার, টেনশন কইরো না। তারপর আম্মুকে পাঠালাম। এটা যে একটা মেয়ের জন্য কী পরিমাণ লজ্জার!
“আমি এখনও অবিবাহিত। আমার মায়ের চিন্তা, এখনও বিয়েশাদি হয় নাই। এর মাঝে কীসব হয়ে গেল! মেন্টালি আমি ভেঙে পড়ছি। আমি কবে স্ট্যাবল হব, আমার ফ্যামিলি কবে স্ট্যাবল হবে- জানি না।”
৫ অগাস্টের পর থেকে নানাধরনের হুমকি-ধমকিমূলক মেইল আসা শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, “৯ সেকেন্ডের ভিডিওটা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এত পরিমাণ ছড়িয়ে গেল যে অনেকেই বললো, ‘এটা এআই দিয়ে করা’। তারপর আসল ভিডিওটাও ততক্ষণে মানুষ বের করে ফেলেছে। আর আমি ফেইসবুক পেইজ থেকে আমার বাইটটা যখন আপলোড করি, তার এক ঘণ্টা পরপরই আমার মেইলে বিভিন্ন থ্রেট আসা শুরু করে।
“মেইলে তারা বলছে, ‘এরপর থেকে যখন কোনো ভিডিও এডিট করব, তখন ভিডিওতে কোনো ট্যাটু থাকবে না।’ তারা আমার কাছ থেকে তিন হাজার ডলার চেয়েছিল। তারা আমায় হুমকি দিচ্ছিল- ‘যদি টাকা না দাও, এরপর থেকে আরও ভালোমত এডিট করব’।”
পিয়া বলেন, “আমি সাইবার ক্রাইমে মেইলের কপিগুলো দিয়েছি। যে থ্রেট দিচ্ছে, তার আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমি জেনেছি, এটা বাইরের দেশ থেকে করা হচ্ছে। তবে করাচ্ছে দেশের কেউ।”
আসলে কী ঘটে?
সোশাল মিডিয়ায় সাম্প্রতিক বহুল চর্চিত বিষয় হয়েছে টেলিগ্রামে থাকা ড্রেস রিমুভার বট, যা মূলত জনপ্রিয় অ্যাপ টেলিগ্রামের একটা ফিচার। টেলিগ্রাম অ্যাপে ছবি ব্লার করার জন্য কিংবা ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সরিয়ে ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বট রয়েছে, ড্রেস রিমুভারও তেমনই একটি বট।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, “নানা ধরনের বট আছে। এটা আসলে সফটওয়্যার ইন্টিগ্রিটি এবং এইরকম বট যেকোনো সার্ভার বা কম্পিউটারে থাকতে পারে। যেকোনো রিমোট প্লেস থেকে এই বটের সঙ্গে কানেক্ট করে তাকে দিয়ে কোনো একটা কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।
“যেমন- চ্যাটবট খুব পরিচিত। সোশাল মার্কেটিং যারা করতেছে, তারা এটা খুব ব্যবহার করছে। আবার কাস্টমার কেয়ারে দৈনিক ১০০টা অভিযোগ আসলে কমন আন্সারগুলো দেওয়ার জন্য মানুষের প্রয়োজন পড়ে না। এর জন্য একটা চ্যাটবডি কথা বলতে পারে। সে আপনাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কী চান। যখন হিউম্যানের দরকার, তখন সে একটা হিউম্যানের কাছে ফরোয়ার্ড করে। একটা কল সেন্টারে আগে যেখানে এক হাজার জন দরকার হতো, বট ইউজ করে এখন সেখানে ২০ জন দিয়ে সেই কাজটা করা সম্ভব।”
সুমন বলছিলেন, “কিন্তু খারাপ ভার্সনের বটও আছে। যেমন- ম্যালওয়ার বট। ধরুন, আপনি কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করেছেন বা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন, সেখান থেকে একটা বট আপনার মোবাইলে বা পিসিতে ইন্সটল হয়ে বসে থাকল।
“বসে থেকে আপনার কি-বোর্ডে আপনি কী টাইপ করছেন বা কোথায় কোন ইউজারনেম পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন, সেগুলা ক্যাপচার করতে থাকে। অর্থ্যাৎ, যেগুলো মানুষের বিকল্প হিসেবে কোনো পার্টিকুলার কাজ কুইক এবং ফাস্ট এফিশিয়েন্সিতে করে, সেগুলোই বট।”
নির্দিষ্ট কিছু বট ব্যবহার করে মুহূর্তেই একজনের ছবি অন্যরকম করে ফেলা যায়। এমনকি একটা ছবি থেকে ভিডিও পর্যন্ত বানিয়ে ফেলা যায়।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমনের ভাষায়, “এআইবেজড যে গ্রাফিকস টেকনোলজি আসছে, সেটা হতে পারে ছবির জন্য, এমনকি ভিডিওর জন্যও- সেগুলো দিয়ে খুব সহজে নানা ধরনের ট্রান্সফর্মেশন করা যায়। ফটো এডিট করে যেমন একজনের চেহারা আরেকজনের চেহারায় নিখুঁতভাবে বসিয়ে দেওয়া যায়, এখন এটা ভিডিওতেও করা যায়।
“আগেও ফটোশপ দিয়ে যেকোনো ছবিকে সম্পাদনা করা যেত, কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ ছিল। ফটোশপে দক্ষ না হলে একটা সাধারণ ছবিকে নগ্ন ছবিতে রূপান্তরের কাজও বেশ জটিল। আগে তো আমরা ফটোশপে দেখতাম, ছবি এডিট করে করতো। এখন ভিডিওতে যদি একটা ফেইস অ্যাটাচ করে দেন, তাহলে পুরো ভিডিওতে ওই ফেইসটা কনভার্ট হয়ে চলে যাবে। খুব খেয়াল করে না দেখলে হয়ত ধরাই যাবে না যে এটা ফেইক একটা ভিডিও।”
কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ‘ক্ষমতার’ কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আগে এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো। ম্যানুয়ালি করতে গেলে তো প্রচুর সময় দিয়ে কাজটা করতে হয়। কিন্তু এখন এআইবেজড যে টুলগুলো আছে, এগুলো দিয়ে খুব সহজে এই কাজগুলো করা যায়। যে ছবি সম্পাদনা করতে ফটোশপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়, সেটা এখন এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সাহায্যে মাত্র কয়েক মিনিটেই করে ফেলা যায়।”
‘টার্গেট’ মেয়েরাই
আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে হয়রানিতে মেয়েদেরকেই বেশি ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। এই বাস্তবতায় অনেকেই সোশাল মিডিয়াতে ছবি শেয়ার করতে ভয় পাচ্ছেন।
তেমনই একজন সিদ্ধেশ্বরী কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া রহমান। তিনি ইতোমধ্যে তার সব ধরনের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি সরিয়ে ফেলেছেন।
“এই ঘটনা দেখার পর আমি অলরেডি আমার সব ছবি রিমুভ করে দিছি। কারণ আমি ভাইরাল হতে চাই না।“
তবে তিনি এও বললেন, “আমি জানি যে ছবি সরিয়ে ফেলা কোনো সমাধান না। কিন্তু কিছু করারও নাই। কে কোথা থেকে কিভাবে আমার ছবি ইউজ করে হয়রানির মাঝে ফেলবে, কে বলতে পারবে?”
অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এই নতুন পরিস্থিতিতে মেয়েদেরকে বাড়তি সামাজিক, মানসিক চাপ সহ্য করতে হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগী নাঈমা।
“আমার জায়গায় যদি একটা ছেলে থাকতো, তার কিন্তু মোটেও এতটা চাপ নিতে হতো না।”
প্রতিকার কী
অনেক ভুক্তভোগীই এই ওয়েবসাইটের সাহায্য নিচ্ছেন বলে জানালেন নাঈমা।
“আমার পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেক মেয়েরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমি তাদেরকে ওই ওয়েবসাইটটির কথা বলছি। যদিও কেউ কেউ বলছে, তারা ওখানে ছবি সাবমিট করলে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। অনেকে আবার বলেছে, ‘কাজ হচ্ছে’।”
ওয়েবসাইটটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, “দিস ইজ আ গ্রেট ইফোর্ট ফর দ্য ভিক্টিমস টু রিমুভ দ্য ফেইক ইমেজ অর ভিডিও ফ্রম সাম পপুলার সোশ্যাল মিডিয়া লাইক ফেইসবুক, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি। অ্যান্ড ইট ক্লেইমস ইট হ্যাজ আ গুড সাকসেস রেটস।”
ভুক্তভোগীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন সুমন।
তিনি বলেন, “করণীয় বলতে একটাই হতে পারে। সবার আগে একটা লিগ্যাল কমপ্লেইন করা। আমাদের পুলিশের যে সাইবার ক্রাইম ইউনিট আছে, তারা হেল্প করার চেষ্টা করেন। অনেকসময় তারা পারেনও। মূলত কিছু কিছু কমন প্ল্যাটফর্ম, যেমন ফেইসবুক বা গুগলের সার্ভিসগুলোর সাথে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা যোগাযোগ আছে।
“সেখান থেকে তারা ভুক্তভোগীর ছবি বা ভিডিওটা রিমুভ করার জন্য হেল্প করতে পারেন। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কে আপলোড করেছেন, সেটাকেও বের করে ফেলা সম্ভব। এই কমন সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই এটা বের করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু ভিডিওটা কে ক্রিয়েট করেছে, কোন টুল দিয়ে করেছে, সেটা সরাসরি বলা মুশকিল।”
সুমন বলেন, “কিন্তু টেলিগ্রাম খুব ফ্লেক্সিবল একটা টুল, হোয়াটস অ্যাপের মতো মেসেজিং টুল। যেহেতু এটা ফ্রি, সেহেতু এটার অনেক প্লাগ-ইন অনেকে ডেভেলপ করতে পারে, ইউজ করতে পারে। এটার কিন্তু অনেক পজেটিভ ব্যবহার আছে। শুধুমাত্র এখানে অপব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
“তবে আমার কাছে মনে হয়, যদি এই বটটাকে একটা ক্ষতিকর বট বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি টেলিগ্রামের সাথে যোগাযোগ করে অভিযোগ করে, তাহলে টেলিগ্রাম এটাকে রিমুভ করে দিবে। টেলিগ্রাম হয়তো হেল্পও করবে যে কারা কারা এই বটগুলো অন্যকে ডিফেমেশনের জন্য ব্যবহার করছে।”
প্রতিকারের বিষয়ে সুমন বলেন, “যদি এটা এমন হতো যে একদম ডার্ক ওয়েব থেকে এই কাজটা করতেছে, তাহলে ইট ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু ট্র্যাক। কিন্তু এটা যেহেতু খুব কমন এবং পপুলার একটা ইন্টিগ্রিটি এবং টেলিগ্রামের ওপর বেইজ করে করা, সেহেতু এটা চাইলেই বন্ধ করা যাবে।”
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট) প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান বলেন, “আমি এ বিষয়ে শুনেছি, কিন্তু অ্যানালাইসিস করিনি এখনও। আমরা শুনতেছি যে দেশের বাইরে থেকে এআই টুলস ব্যবহার করে এটা হচ্ছে।
“টেলিগ্রাম থেকেও করা হচ্ছে শুনেছি। কিন্তু এ জিনিসটা একটু চেক করতে হবে, দেখতেছি। এখন অ্যানালাইসিস না করে কোনোকিছু বলতে পারি না আমরা।”
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, “আমরা এ বিষয়ে তথ্য পেয়েছি, এ বিষয়ে আমরা কনসার্ন, আমরা জানি। কিন্তু এখনও আমাদের কাছে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ভিক্টিমাইজড হয়েছে- এমন কোনো অভিযোগ করেনি।
“আসলে নতুন একটা বিষয়। অবশ্যই আমি আহ্বান জানাব- যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারা যেন অবশ্যই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করে। পুলিশ একটা না একটা ওয়ে তো বের করবেই। যে জিনিসটা ফেইক, যে জিনিসটা মেইড, তার রুট অ্যানালাইসিস করে অবশ্যই আমরা আমাদের ফরেনসিক ল্যাব থেকে জানতে পারব যে সত্য না মিথ্যা।”
এ বিষয়ে টেলিগ্রামের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ইন্সিডেন্ট ঘটলে আমরা রেসপন্ড করব। ইন্সিডেন্ট না ঘটলে শুধু শুধু তো আমরা যোগাযোগ করব না। কারণ আমরা তো জানিও না কারা ভুক্তভোগী, কার সমস্যা হয়েছে। সমস্যা জানালে ক্লু থাকবে। আর ক্লু থাকলে পরে পুলিশ সে ক্লুগুলো ধরে আগাবে।”
সুত্র: বিডিনিউজ২৪.কম