ঢাকার নটরডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম খান (১৮)। পড়াশোনার সুবাধে কলেজের হোস্টেলেই থাকতেন। গত ঈদুল আজহার দুইদিন আগে ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে আসেন। পরে ২৮ জুলাই বাড়ির কাউকে না জানিয়ে চলে যান। সিরাজগঞ্জে গিয়ে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র অন্যতম সদস্য চিকিৎসক সোহেল তানজিমের কাছে দেখা করেন। এরপর তার সঙ্গে চলে যান মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানায়।
ফাহিম যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া আমতলা এলাকার অ্যাডভোকেট আইয়ুব খান বাবুলের ছেলে। বাবুল আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা পিপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই স্ত্রীর পরিবারে ৪ সন্তানের মধ্যে ফাহিম সবার বড়।
এদিকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ফাহিমের আটকের ঘটনায় হতবাক তাদের পরিবার ও এলাকার লোকজন। সহজ সরল ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় পরিচিত হলেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি মেলাতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফাহিমের বাবা এলাকায় পরিচিত আইনজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তি। বাবার মতো এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসাবেই সুনাম রয়েছে ফাহিমের। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। রাতে মাঝে মধ্যে শহরে বিভিন্ন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিত। ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
বাবা আইয়ুব খান বাবুল জানান, ফাহিমের ছোট বেলাতে মা মারা যায়। মনের ভেতরে সেই যন্ত্রণা ছিল। আবার নানা রোগেও ভুগছিল সে। বাসায় থাকলে মুঠোফোন নিয়ে থাকত; কিন্তু কোনো আড্ডাবাজি, দলাদলিতে ছিলেন না। জঙ্গিবাদে জড়ানোর মতো কোনো বিষয় তাদের চোখে পড়েনি। সন্দেহজনক কোনো লোকজনকেও তারা আসা–যাওয়া করতে দেখেননি। ছেলের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয় কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তারা। তার ছেলে অল্প বয়সী, খুব সহজ-সরল। ছেলের জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়টি তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। কেউ হয়তো তাদের ফাঁসিয়ে দিতে পারেন বলে তার ধারণা।
যশোর ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মফিজুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ ফাহিমের বাবা থানায় জিডি করে আমাদের শরণাপন্ন হন। এরপর তার মোবাইল ট্র্যাকিং করে জানতে পারি পাবনার একটি যাত্রীবাহী বাসে করে সে যশোর ছেড়েছে। এরপর পরিবার ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি গত ৫-৬ মাস ফাহিমের গতিবিধি পরিবর্তন এসেছিল। মুখে দাঁড়ি রেখেছে, বাসায় একা একা থাকে। মোবাইলে ভাই ভাই বলে কথা বলতো। এসব বিশেষ লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারি ধর্মীয় কোনো সংগঠনে জড়িত হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। এরপর আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরবর্তীতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিভি) ইউনিট তদন্ত করে ফাহিমের সূত্র ধরেই পাবনা এবং পরে কুলাউড়াতে অভিযান পরিচালনা করেন। এতে দুই দফায় ২৬ জনকে আটক করে তারা।
উল্লেখ্য, শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিভি) ইউনিট ৬ নারীসহ ১০ জনকে আটক করে। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। এই ১৩ জনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের খায়রুল, তার স্ত্রী ও তাদের ১২ মাস বয়সী শিশুসন্তান রয়েছে। ঐ বাড়ি থেকে জিহাদি বই ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। তারা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। এ ঘটনার পর সোমবার একই এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আরও ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক